“উঠে এসো রীণা এখুনি জোয়ার আসবে”। সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসে রীণা। পায়ের কাছে শাড়ীটা ভিজে গেছে নদীর জলে”।
“তুমি কি জোয়ার ভাটারও হিসেব রাখো নাকি? মাঝি মাল্লারা রাখে জানতাম”।
“ তা জানিনা, তবে শুনতে পাচ্ছ না কুবোপাখি ডাকছে”।
“কুবোপাখি ডাকলে জোয়ার আসে বুঝি?”
“ওমা! তুমি জানো না বুঝি?
“কী?”
“সে এক দুঃখের গল্প। কুবোপাখি ছিল কোন এক গাঁয়ের দরিদ্র গৃহস্থ বাড়ীর বউ, দু’বছরের ছেলেটা মায়ের ভারী ন্যওটা, মাকে ছাড়তেই চায় না, সেই গাঁয়েরই পাশ দিয়ে বয়ে গেছে জোয়ার ভাটা খেলে এমনি এক নদী।সেদিন সারা সংসারের জামা কাপড় নিয়ে বউটি গেছে নদীতে কাচতে, টলমল পায়ে ছেলেটিও গেছে মায়ের পিছু পিছু। মায়ের গায়ের সঙ্গে লেপটে থাকতে চায়। সৃষ্টির কাজ আর সারা হয় না তার। বাধ্য হয়েই ছেলেটিকে ঘুম পাড়িয়ে দেয় নদীর পাড়ে সবুজ ঘাসে। জামা কাপড় কাচা হলে গাছের ডালে, ঘাসের ওপর যখন মেলে দিচ্ছে, সেই সময় নদীতে হঠাৎ করে জোয়ার আসে । ছুটে গিয়েও আর ছেলেকে খুঁজে পায় না বউটি, শেষে নদীতেই ঝাঁপ দেয় ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে”।
“তারপর”?
“তারপর আর কি,ফিরিয়ে কি আর কাউকে আনা যায়। এখন সেই বউটি কুবো পাখি হয়ে নদীর চরে চরে ঘুরে বেড়ায়,জোয়ার আসার আগে বারে বারে মানুষজনকে সাবধান করে”।
“তারপরেও তো কত লোক ভেসে যায় জোয়ারে, তাই না অনিন্দ্য”। ভেজা শাড়ি থেকে চুঁইয়ে পড়া জল রীণার পায়ের পাতায়। অনিন্দ্য তাকিয়ে ছিল রীণার ভেজা পায়ের দিকে সম্ভবতঃ কোন অপরাধ বোধ নিয়ে।
“তুমি কার ভেসে যাওয়ার কথা বলছ রীণা”।
“কেন আমাদের, কতবার ভেসে গেছি জোয়ারে, কখনো কোন রিসর্টে,কিম্বা তিনতারা হোটেলের দামী রুমে, একান্ত কোথাও নাহলে তোমার বন্ধ ফ্ল্যাটের অনেকদিনের অব্যবহৃত বিছানায়। খোঁজ করিনি আমার ছেলে তখন কোন নদীর ধারে ঘুমিয়ে ছিল কিনা”। কোন উত্তর দেয় না অনিন্দ্য, বেশ কিছুক্ষণের নীরবতায় জোয়ারের জলে নদীর পাড় ভাঙ্গার শব্দ হয়।
“ চলো পশ্চিম আকাশে মেঘ উঠছে, সাথে সাথে নদীর চেহারা পালটে যাচ্ছে, হয়ত ঝড় উঠবে”।
“ চিন্তা করো না, আমি ট্যাক্সি কিংবা ক্যাব নিয়ে নেব তোমাকে কষ্ট করতে হবে না”।
“কষ্টের কি আছে রীণা, আমার গাড়ীতে তোমাকে ড্রপ করে দেব,প্রতিবারই তো তাই হয়েছে, দেখছ না আকাশে অবস্থা ভালো নয়”।
“ কুবোপাখিটা ডাকছে শুনতে পাচ্ছ না,দেরী হয়ে যাবে, আমি চলি অনিন্দ্য”।