অভিধান খুঁজিলে রকবাজি শব্দটি পাইলেও তাহার ব্যপক ব্যবহার এখন আর সেরূপ ভাবে চোখে পড়ে না। অথচ এক সময় রকবাজি করে নাই এইরূপ কাহাকেও যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে খুঁজিয়া পাওয়া ভার ছিল। সমাজের চোখে এই রকবাজি ঘৃণিত হইলেও তাহাকে উচ্ছেদ করিবার কোন বৈপ্লবিক পন্থা কেহই গ্রহণ করে নাই, বরং সময়ের সাথে সাথে রকের চরিত্রগুলির পরিবর্তন ঘটিয়াছে। কিন্তু তাহাদের সীমারেখাহীন আড্ডায় আজ পর্যন্ত কেহ ভেটো প্রয়োগ করে নাই।
ষাটের দশকের শেষের দিকে প্রথাগত শিক্ষায় সকলেই কম বেশী শিক্ষিত হইলেও হিমশৈল রূপ বেকার সমস্যার চূড়া বিষয়ে কেহই বড় একটা উৎকন্ঠিত ছিলাম না, নির্মল আড্ডার স্রোতে গা ভাসাইয়া দিন গুজরানই ছিল অন্যতম বিনোদন। তখন আমরাও প্রত্যেকে কোন না কোন গুরুর কাছে দীক্ষিত। সকাল সন্ধ্যায় গুরুর মহিমা কীর্তন, যাহারা এখনো পর্যন্ত গুরুহীন হইয়া রহিয়াছে, বা অন্য গুরুর সবেমাত্র অনুরক্ত হইয়া পড়িয়াছে, অনাব্রত যাজনের মাধ্যমে আমাদের গুরুর প্রতি তাহাদের উৎসাহিত করিয়া তোলা এবং পরিশেষে বীজ মন্ত্র প্রদান করিয়া গুরুভ্রাতা রূপে তাহাদের দলভুক্ত করিয়া লওয়াই দৈনন্দিন গুরু ভজনার একটি বিশেষ অঙ্গ বলিয়া বিবেচিত হইত।অত্যন্ত আন্তরিকতার সহিত এই ক্রিয়া কর্মে নিজেদের নিয়োজিত রাখিতাম। এই প্রসঙ্গে বলিয়া রাখা ভাল, উত্তমকুমার ভিন্ন আর কাহাকেও গুরু হিসাবে মানিয়া লওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিলনা। সদ্য মুক্তি পাওয়া ছবি কে সর্বাগ্রে দেখিয়া আসিবে তাহা লইয়া এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতা চলিত। বহু পুরাতন উত্তমকুমার অভিনীত চলচিত্র হয়ত মফস্বলের কোন ওঁচাটে প্রেক্ষাগৃহে প্রর্দশিত হইতেছে, এই খবর পাওয়া মাত্রই প্রেক্ষাগৃহের গুণগত মান বিচার না করিয়া সেখানে ছুটিয়া গিয়াছি শতেক অসুবিধা সত্ত্বেও । এই না হইলে গুরুভক্তি।
আমাদের মধ্যে যাহারা হিন্দী ছবির ভক্ত, তাহারা অনেকেই দিলীপকুমার, রাজকাপুর, দেবানন্দ’কে গুরু বলিয়া স্বীকার করিয়া লইলেও রকের আড্ডায় আমাদের সংখ্যা গরিষ্ঠতার গুরুত্ব অনুভব করিয়া নীরবে বসিয়া থাকিত। কখনোই উত্তম আলোচনায় ব্যাঘাত ঘটাইত না। তবে আমাদের মধ্যে সীমিত কয়েকজন যাহারা নিজেদের ম্যাগির সুইট এন্ড সাওয়ার সস্এর ন্যায় ডিফারেন্ট ইন্টেলেকচুয়াল মনে করিত, নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখিতে উত্তমকুমারের প্রতিদ্বন্ধী হিসাবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়’কে খাড়া করিয়া শুধু গুরু বলিয়া মানিয়া লইয়াছিল তাহাই নয় অভিনয়ের উৎকর্ষতা লইয়া তুলনামূলক আলোচনায় বারংবার উত্তম অবমাননায় ব্রতী হইত। সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসাবে আমরা কখনো তাহাতে যুক্তি তর্কের অবতারণা করিয়া তর্কযুদ্ধে সামিল হইতাম না, আমাদের সমবেত ব্যক্তিগত আক্রমণে শুধু তাহাদেরকেই নয় তাহাদের নায়কেও নস্যাৎ করিয়া দিতাম ব্যঙ্গ বিদ্রুপ গালাগালিতে তৎসহ অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিতে।মাঝে মাঝেই তাহাদের অকস্মাৎ উপস্থিতি,লঘুগুরু না মানিয়া মন্তব্য আমাদের চলমান আলোচনার মন্দাক্রান্তা ছন্দের পতন ঘটাইতো। তখন সমবেত আক্রমণে তাহাদের দিশাহারা করিয়া তোলা ছাড়া আর কোন উপায়ান্তর থাকিত না। এই সমস্ত তুচ্ছাতিতুচ্ছ কারণে আড্ডাস্থল সেই চিরন্তন রক বিকালে সন্ধ্যায় সরগরম হইয়া উঠিত।
আমাদের মধ্যে রতন ছিল একেবারে ব্যতিক্রমী মানসিকতার । সে শাম্মী কাপুর’কে গুরু পদে বরণ করিয়া নিজের যাবতীয় প্রাণোচ্ছ্বাসের প্রকাশ ঘটাইত একমাত্র শাম্মী কাপুরের জন্যই। বাংলা সিনেমা সম্পর্কে রতনের বীতরাগ কাহারো অবিদিত নয়। ফলে সে কখনোই উত্তমকুমারের সহিত শাম্মীকাপুরের তুলনামূলক আলোচনায় আগ্রহী নয়।শুধু যে এই সমস্ত বাক বিতন্ডা এড়াইয়া চলিত তাহাই নহে আমাদের রক সাম্রাজ্য সচেতন ভাবেই পরিহার করিয়া চলিত, পাছে তাহার একান্ত গুরুভক্তি বিঘ্নিত হয় । তাহার গুরুর প্রতি নিবেদিত প্রাণ দেখিয়া অসীম হাওলাদার কিছুটা সচেষ্ট হইয়া ছিল উত্তমকুমার’কে লইয়া একটি আলাদা জগৎ রচনা করার।
আমাদের রকের ঠিক বিপরীতেই ডাঃ মোহিনী বটব্যালের প্রাসাদোপম অট্টালিকা। তাহারই উদ্যান বাটিকায় ডাক্তারবাবুর তন্বী সুন্দরী কন্যা সুচরিতা সখীদের লইয়া অপরাহ্ণ কালীন বায়ু সেবনের উদ্দেশ্যে গজেন্দ্র গমনে এমুড়ো হইতে ওমুড়ো প্রায়ই পায়চারী করিত। যেখান হইতে আমাদের রক এবং আমাদের ক্রিয়াকলাপ দৃষ্টিগোচর হয়।রকের একঘেয়ে আড্ডায় ইহাই ছিল দখিনা বাতাস। সেই বাতাসের স্বাদ গন্ধ গ্রহণ করিবার উদ্দেশ্যে আমরা অত্যন্ত সচেতন ভাবে সুন্দরীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করতাম, তারস্বরে উত্তম সংগীত,উত্তম সংলাপের মাধ্যমে । ফলস্বরূপ কখনো কখনো তাহাদের কটাক্ষ পাতে ধন্য হইতাম। এতকিছু সত্ত্বেও আমরা জানিতাম সুচরিতা আকাশ গঙ্গার ওপারের বহু দূরের নক্ষত্র। সুতরাং রকের সীমানা অতিক্রম করিয়া সুচরিতার সহিত অন্তরঙ্গ হইবার সাহসী বাসনা কোন মতেই প্রশয় দিতাম না। কিন্তু অসীম মনে মনে অন্য ধারণা পোষণ করিত। ইহার কারণও ছিল, একাধারে সে রূপবান, উপরন্তু পিতৃ অর্জিত অর্থের যথেচ্ছ সদ্ব্যবহারে অকুন্ঠিত। প্রায়শঃই তাকে দেখা যেত চোখে গগল্স ও ঠোঁটে সিগারেট ঝুলাইয়া দুই হাত একসাথে দুলাইয়া উত্তমকুমারের ন্যায় ধীর পদে হাঁটিতে ,উত্তমকুমারের ন্যায় ঘাড় ঘুরাইয়া ডাক্তারবাবুর উদ্যান বাটিকার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিতে, এতদ্সত্ত্বেও সুচরিতার দৃষ্টি আকর্ষণে বারংবার ব্যর্থ হইলেও অসীমের নিত্য নতুন উদ্যোগের কোন অভাব ছিল না। ইতিমধ্যে একটি অন্য ঘটনা ঘটিল।
রতনের কথা আগেই বলিয়াছি, সেইদিন শাম্মীকাপুরের মুক্তি প্রাপ্ত কোন ছবির প্রথম দিনের প্রথম প্রদর্শণীর দেখিবার গৌরব অর্জন করিতে গিয়া রতন জামা ছিঁড়িয়া ঠোঁট কাটিয়া রক্তাক্ত দেহে বীরত্বব্যঞ্জক ভাব লইয়া পুরো চলচিত্র’টি হৃদয়ঙ্গম করিয়া সিনেমা হল হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া সরাসরি আমাদের রকের আড্ডায় উপস্থিত হইল। এবার সেই দুর্লভ টিকিট সংগ্রহের তাহার সাহসী প্রয়াস সম্পর্কিত নাতিদীর্ঘ ভাষণ দিয়া ছবির গুণগত মান সম্বন্ধে কোন আলোচনায় না গিয়া আমাদের আড্ডা বৃত্তের অদূরে রাস্তায় নামিয়া মৃগীরোগীর ফিট হইবার সময়কালে যেরূপ কম্পন দেখা যায় তাহা সমুদয় নিজের অঙ্গ প্রত্যঙ্গে সঞ্চারিত করিয়া দুই বাহু দুই দিকে প্রসারিত করিয়া, উর্দ্ধ আকাশে মুখ তুলিয়া তারস্বরে ‘ইয়াহু’ বলিয়া চীৎকার করিয়া উঠিল, অহেতুক মস্তক আন্দোলনের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হইল এক বিচিত্র নাচ ও উদ্দাম সংগীত, ফলস্বরূপ ঘুমন্ত পথক্কুকুর অসময়ে নিদ্রা ভাঙ্গিয়া বিপদাশংকায় নিরাপদ দুরত্বে গিয়া ঘেউ ঘেউ করিয়া উঠিল। সমস্ত এলাকা ক্ষণেকের তরে মুখরিত হইয়া গেল, তাহার নৃত্য গীত পরিবেশনে। রতনের কাছ হইতেই জানা গেল ইহা নাকি প্রেম সংগীত, নায়িকা’কে মুগ্ধ করিবার উদ্দেশ্যেই চলচিত্রে পরিবেশিত হইয়াছে , প্রতিভাধর রতন একবার দেখিয়াই তাহা সম্পূর্ণ নকল করিয়া আমাদের ধন্য করিয়াছে। তবে এই নাচ গানের পর নায়িকার কি প্রতিক্রিয়া হইয়াছিল, সেই প্রেম পূর্ণতা লাভ করিয়াছিল কিনা তাহা জানিবার কোন অবকাশ না থাকিলেও রতনের এই পারফর্মিং যুগ্ম আর্টের প্রতিভায় এবং তাহার পরিবেশনে আমরা এক কথায় মুগ্ধ । উত্তমকুমারের চলন বলন নকল করিয়া অসীম যাহা পারে নাই, রতন তাহা সুসম্পন্ন করিল সহজাত প্রতিভায়। ইহা দেখিয়াই সুচরিতা শুধু ক্ষান্ত হয় নাই, তাহার কলহাস্যের ঝংকারে আমরাও বঞ্চিত হইলাম না। এই স্বর্গীয় নৃত্য সংগীতের পর সুচরিতার হাস্য রেশ বজায় রাখিতে আমাদের রকস্থলে বেশ কিছুক্ষণ হিরন্ময় নীরবতা বিরাজ করিয়া ছিল। এই সন্ধিক্ষণে আমার মনে হইল যে করিয়াই হোক রতনকে আমাদের দলভুক্ত করিতে হইবে এবং তাহার মূল চাবি কাঠি অবশ্যি সুচরিতা। ফলে রতনকে সহজেই বুঝাইয়া দেওয়া গেল “যে হাসে সেই ফাঁসে” অর্থাৎ সুচরিতা অসীমের নহে সে রতনের প্রতিই অনুরক্ত। ইহা শুনিবার পর রতনের মুখমন্ডল প্রেমিক শাম্মী কাপুরের সলাজ রক্তিম আভায় প্রতিভাত হইয়া উঠিল।
ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল সদা সর্বদায় বিরোধী অধিকৃত পঞ্চায়েত বা পৌরসভা নিজেদের করতলগত করিবার অভিপ্রায়ে নানান ফন্দি ফিকির গ্রহন করিয়া থাকে । এক্ষেত্রে যেহেতু আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, ব্যতিক্রমী বা হইব কেন অতএব একই ভাবনায় আমাদের মস্তিষ্ক উদবুদ্ধ হইবে তাহা নিতান্তই স্বাভাবিক। কার্যকরী সমিতির গোপন বৈঠকের ন্যায় আমাদের কয়েকজন জনসমক্ষের অন্তরালে নির্মীয়মান কোন বাড়িতে মোমবাতির ক্ষীণ আলোয় এক দীর্ঘ আলোচনার পর এক অভিনব সিদ্ধান্ত গৃহীত হইল, যে করিয়াই হউক রতনের গুরুবদল ঘটাইতে হইবে। ইহা তো খুব সহজসাধ্য নয়। কিভাবে তাহা সম্ভব হইবে এই আলোচনায় দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হইলেও যখন কোন মতেই সুনিদিষ্ট পথের সন্ধান পাওয়া যাইল না তখনই মৃন্ময় সমাধান সুত্র পেশ করিল। রতনের গুরুবদলের ক্ষেত্রে সুচরিতা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা লইতে পারে।
রতন শাম্মীকাপুরের অভিনয় ভঙ্গিমা প্রকাশ্য রাস্তায় যেভাবে প্রদর্শণ করিয়া থাকে, তাহার কিয়দংশ যদি আমরা করিতে পারিতাম তাহা হইলে ওই অর্বাচীন সৌমিত্র’র অনুগামীরা ভবিষ্যৎ’এ কোনদিন তুলনামূলক আলোচনায় অগ্রসর হইত না। এইরূপ চিন্তা করিয়া রতনকে গোপনে ডাকিয়া লইলাম। প্রথমেই তাহাকে বলা হইল সত্যই যদি সে সুচরিতার হৃদয় হরণ করিতে চায়, তাহা হইলে বেশ ভূষার পরিবর্তনের সাথে সাথে আচার আচরণে উত্তমকুমার সুলভ গাম্ভীর্য আনিতে হইবে। তাহা শাম্মী কাপুর’কে নকল করিয়া সম্ভব নহে। উত্তমকুমারের ন্যায় ভাব ভঙ্গী আনার বিশেষ প্রয়োজন। রতন অসীমের উদাহরণ টানিয়ে একবার আপত্তি করিয়া ছিল। কিন্তু আমাদের সমবেত যাজনে তাহার আপত্তি খড়কুটা ন্যায় উড়িয়া গেল। আমাদের আনীত যাবতীয় খাদ্যাদি সদ্ব্যবহার করিয়া জানাইয়া দিল, উত্তমকুমারের কোন ছবি সে দেখে নাই। ফলে হঠাৎ করিয়া সে উত্তমকুমারের অনুগামী হইতে পারিবে না। পাকা ঘুঁটি কাঁচিয়া যাইতেছে দেখিয়া পুনরায় সুচরিতার প্রসঙ্গ আনিতে হইল। মনে মনে দুর্বলতা থাকিলেও রতনের জ্ঞানের নাড়ী কিন্তু টনটনে। ডাক্তারবাবুর মেয়ের সহিত তাহার প্রেম হইলেও তাহা কোনদিনই পরিপূর্ণতা লাভ করিবে না এ ব্যাপারে সে নিশ্চিত। তখন উপায়ন্তর না দেখিয়া শাম্মী কাপুরের ছবির প্রসঙ্গ উত্থাপন করিতে হইল। প্রয়োজনে সে সুচরিতাকে ইলোপ করিবে, একই সাথে রাজত্ব ও রাজকন্যা রতনের করায়ত্ত হইবে, কিন্তু সর্ত ওই উত্তমকুমার ভিন্ন গতি নাই। উত্তমকুমারের ন্যায় সুচরিতাকে বুলেট মোটর সাইকেলের পিছনে বসাইয়া একবার গতিময় হইতে পারিলে সে পথ আর ফুরাইবে না। সুচরিতা তখন তাহারই হইবে।গভীর চিন্তার পর সবদিক বিবেচনা করিয়ে রতন উত্তমকুমারের ছবি দেখিতে নিম রাজি হইল।
শুধু বাংলা সিনেমা দেখিবার প্রস্তাব তো দেওয়া যায় না, ইহার জন্য তাহাকে কোন ব্যয়ভার তো বহন করিতেই হইবে না, উপরন্ত আনুষঙ্গিক হিসাবে ঘুগনী পাউরুটি চা এবং তৎসহ প্লেন উইলস সিগারেট’এর উৎকোচ, যাহা সে মোটেই অবহেলা করিতে পারিল না,এককথায় রাজী হইলেও তৎসহ একটি কবিরাজী কাটলেটের আর্জি পেশ করিল, মানিয়া লওয়া ছাড়া আমাদের তখন আর কোন গত্যন্তর ছিল না। । ওই সময় উত্তমকুমার ভারতশ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসাবে পুরস্কৃত হইয়াছেন এন্টনী ফিরিঙ্গী ছবিতে অভিনয়ের জন্য। অলকা সিনেমা হলে তাহা পুর্নঃপ্রর্দশিত হইতেছে। আর কোন চিন্তা ভাবনার অবকাশ রহিল না, রতনকে লইয়া এন্টণী ফিরিঙ্গী দেখাইতে লইয়া যাওয়া হইল। সমবেত চাঁদার মাধ্যমে তাহার আপায়্যনের ব্যবস্থাটি ত্রুটিহীন করিয়া রাখা হইয়াছিল। সিনেমা চলাকালীন বারে বারেই মাথা নাড়িয়া আক্ষেপ প্রকাশ করিতে দেখিয়াছি। সিনেমান্তে চায়ের দোকানে কবিরাজী কাটলেট, ঘুগনী পাউরুটি চা সেবা করিয়া সিগারেটে দীর্ঘ টান দিয়া বলিল, “ তোরা আর নায়ক পেলি না শেষে কিনা উত্তমকুমার”। এত পয়সা খরচ করিবার পর রতনের এইরূপ আচরণ বরদাস্ত করা খুবই কঠিন। মাথায় রক্ত চড়িতে ছিল। গুরুনিন্দা শোনা মহা পাপ, গোরক্ত ভক্ষণের সমতুল্য। প্রতিকার না করিলে ঘোরতর অন্যায়। রতনের এই ধরণের প্রতিক্রিয়ার যথাযথ ব্যাখা চাওয়া হইল যথেষ্ঠ ধৈর্য সহকারে। ছবিতে এন্টণী ফিরিঙ্গী এক বাঈজী প্রতি আকৃষ্ট হইয়া তাহাকে প্রেম নিবেদন করে, সেই বাঈজী আবার এক নবাবের আশ্রিতা, নবাব রাগান্বিত হইয়া এন্টণী ফিরিঙ্গীকে বেশ কয়েক বার কষাঘাত করিয়াছিল । এই প্রসঙ্গের অবতারণা করিয়া রতন বলিল, “ এমনই তোদের গুরু পড়ে পড়ে মার খেল চাবুকের বাড়ি, এই যদি শাম্মী কাপুর হত দেখতিস,ওই চাবুক কেড়ে নিয়ে নবাবকে এমন ক্যালান ক্যালাত বৃন্দাবন দেখিয়ে ছাড়ত”।এই ধরনের সিনেমা দেখিয়া মূল্যবান সময় নষ্ট হওয়ার আক্ষেপে ঘাড় নাড়িতে নাড়িতে আমাদের দিকে অনুকম্পার দৃষ্টি দিয়া রতন দোকান ছাড়িয়া চলিয়া গেল। এই প্রসঙ্গ কিন্তু আমরা কখনো ভাবিয়া দেখি নাই,ফলে তাহার অকাট্য যুক্তির সম্মুখে নিশ্চুপ রহিয়া গেলাম। অসীম এবং আদিত্য তৎক্ষণাৎ রতনের যুক্তি সর্বান্তকরণে মানিয়া লইয়া উত্তমকুমারের গুরুত্ব পরিত্যাগ করিয়া রতনের দলে যোগ দিয়া শাম্মী কাপুরের অনুগামী হইয়া গেল ।