শেওড়াফুলী ঢোকার আগেই মণিময় বসার জায়গা পেয়ে গেল, হাতের ব্যাগটা ওপরে রেখে ধপাস করে বসে পড়ল, পাশের লোকটা কিছুটা বিরক্ত হল বসার ধরনের জন্যে। সেদিকে দৃষ্টিপাত না করে মণিময় চলন্ত ট্রেনের জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকল খানিকক্ষণ। হঠাৎ তার কেমন যেন মনে হল সামনের বসে থাকা ভদ্রলোক বিশেষ কৌতুহল নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ভদ্রলোকের দৃষ্টি অনুসরণ করে মণিময় মুখ সোজা রেখে সামান্য নীচের দিকে তাকাতেই টের পেল যে প্যান্টটার জিপার লাগে না ভুল করে সেটাই আজ পরে চলে এসেছে। এদিকে হাওয়াই শার্টের ঝুলটা আবার এত খাটো। তাড়াতাড়ি ওপর থেকে ব্যাগটা নামিয়ে কোলের ওপর রেখে চেন খুলে কিছু একটা খোঁজার ভান করল, পরক্ষণই চেন টেনে ব্যাগটা কোলের ওপরই রেখে দিল যাতে আর কারুর ব্যাপারটা নজরে না পড়ে। সামনের ভদ্রলোক এখন যতই জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকুন না কেন, মাঝে মাঝেই আড়চোখে মণিময়কে লক্ষ্য করছিলেন।
অফিসে কিউবিকলে একটা সুবিধা সামনের দিক থেকে দেখার সম্ভবনা কম। মণিময়ের পাশে ঝুমা নন্দী। বছর তিরিশেকের তন্বী সুন্দরী অন্ততঃ মণিময়ের চোখে।তার শরীর থেকে ভেসে আসা নিত্যনতুন বডিস্প্রের গন্ধে প্রায়ই মশগুল হয়ে থাকে মণিময়।কারণ এই অফিসে একঘেয়ে কাজকর্মের মধ্যে ঝুমাই একমাত্র দক্ষিণের বাতাস। আজ সাবধানতা বজায় রাখতে মণিময় কোলের ওপর রুমালটা বিছিয়ে রাখল। তবুও প্যান্টের ফাঁক হয়ে থাকা বিশেষ জায়গাটা গলায় কাঁটা ফোটার মতই অস্বস্তিকর । ফলে একটা সিলি মিসটেকের জন্যে এইমাত্র বস’এর কাছে একপ্রস্থ ঝাড় খেয়ে এসে সবে বসেছে। পাশে ঝুমার সুন্দর আঙ্গুল গুলো কি’বোর্ডের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যেন পিয়ানোয় সুর তুলছে। মণিময় সামান্য ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল সেইদিকে। ঝুমা টাইপ করে চলেছে। তার বাঁ-হাতের চুড়িতে আটকানো একটা সেফটিপিন নিদিষ্ট ছন্দে দুলছে। একমনে সেইদিকেই তাকিয়েছিল মণিময়। তার দিকে না ফিরেই ঝুমা জিজ্ঞাসা করল “ কি দেখছেন ওমন করে”। তড়িঘড়ি মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল- “না কিছু নয়’। ঝুমা জানে মণিময় তার বডি’স্প্রের একজন সমঝদার এডম্যায়ারার –বডি’স্প্রের গন্ধটা কেমন বললেন না তো”।
“এটা নতুন নাকি”?
“কালই গিফট পেয়েছি, বিদেশী জিনিষ”।
“হবে”।
“ আপনার কি হয়েছে বলুন তো অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে কেন”।সত্যিই বডিস্প্রের গন্ধ বিশ্লেষণ করার মত অবস্থায় সে নেই আজ।
“দেখাচ্ছে বুঝি, না মানে আমার বাঁ-কানটা না খুব খড়খড় করছে কিনা সেফটিপিনটা যদি দ্যান”। “ না না খবরদার এসব জিনিষ একদম কানে ঢোকাবেন না। কাজে মন দিন তখন আর অস্বস্তি লাগবে না ফেরার সময় না হয় একটা ইয়ার ড্রপ কিনে নিয়ে যাবেন”।
(২)
আজ একটু তড়িঘড়ি করেই মণিময় ছুটল ক্যান্টিনের দিকে। এইসময় ক্যান্টিনে ভিড়ই থাকে, কোন বসার জায়গার সন্ধান না করে সকলকে এড়িয়ে কিচেনের দিকে চলল। বিরেন তবু একবার ডাক দিল, “কিহে মণিময় ওদিকে কোথা চললে?” হাতের ইসারায় তাকে আশ্বস্ত করে কুক মন্টুকে ডেকে নিল ভেতর দিকে। মন্টু করিৎকর্মা ছেলে সব ব্যাপারে । । “ কি হয়েছে কি স্যার আপনার চোখ মুখটা কিরকম যেন দেখাচ্ছে ঝামেলা নাকি ”। “ আর বলো না প্যান্টের এই জিপারটা কেটে গেছে একটা সেফটিপিন দিতে পারো”। “ সেফটিপিন!! না, দাঁড়ান অন্য ব্যবস্থা করছি, একটু মোম ঘসে দিলে দেখবেন দিব্যি আটছে গেছে”। “ মোম”? জলে ডোবা মণিময় যেন কুটো ধরতে চাইল। “কিন্তু লাগাবে কি করে”। “চলুন আমার সঙ্গে কলতলার দিকে চলুন”।
মাথা খোলা কলতলা, আশপাশে অন্য অফিস, জানলা দিয়ে কেউ নজর করছে কিনা কে জানে। মাথা উঁচিয়ে এদিক ওদিক দেখছে মণিময়, অন্যদিকে মন্টু উবু হয়ে বসে আধখোলা প্যান্টের জিপারে মোমবাতি ঘসছে। এইসময় এদিকে কারুর আসার সম্ভবনা কম, তবু এই দৃশ্য যাতে কারুর চোখে না পড়ে তাই মণিময় ঘাড় ঘুরিয়ে সবদিকেই নজর রাখছে।
“ হয়ে গেছে স্যার, প্যান্টের বোতামটা লাগান,এ্যাই এবার চেনটা টেনে দিন …এই দেখুন ফাস ক্লাস”। মন্টুর পিঠ চাপড়ে দিল সে ।
টিফিন সেরে মণিময় নিজের কিউবিকলে এসে দেখল ঝুমা আগেই চলে এসেছে।আত্মবিশ্বাস নিয়ে চেয়ারে বসামাত্র ফট্ করে সামান্য আওয়াজ, চোখ নামাতেই রিফ্লেক্স এ্যাকশনে মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল “যাঃ!”
“ কি হল?” “খুলে গেল”। “তাই’, .”হ্যাঁ। ….. তাহলে এই নিন”। চুড়ি থেকে সেফটিপিন খুলে বাড়িয়ে দিল।