“আমি আর কি বলব কাকা, আমরা হলাম কুত্তার জাত হাঁড়ির ঢাকনা খোলা ছিল মেরে দিয়েছি”। বুধনের কথা শুনে হেমন্ত সর্দার টিনের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল,কয়েক পা এগিয়ে এসে বুধনের ঘেঁটি ধরে পিছনে তিনটে লাথি মারল।
“ যাঃ শালা, শোরের পো, চার পাঁচটা মোরগা যা আছে লিয়ে আয় আর তিন জারিকেন চোলাই আর হ্যাঁ দুশোটা ট্যাকা লিয়ে আসতে ভুইলবি না। আজই সুলেখার সঙ্গে তোর বিয়া”।
“ তিন জারিকেন কি হবে গো কাকা, এতগুলো লোক রয়েচি”।নাড়ু সর্দারের কথা শুনে হেমন্ত দাঁত খিঁচিয়ে উঠল।
“ পরের পোয়া মেরে আর কত্ দিন খাবি, বুধন তো তোর এক গ্লাসের ইয়ার, মাল কড়ি কিছু ছাড় ওর যখন বিয়া”।
নাড়ু আর কথা না বললে কি হবে,বুধনের ঠাকুমা হারানী ভিড়ের মধ্যে থেকে উঠে এসে হেমন্তর মুখোমুখি দাঁড়াল,পরনে লাল শাড়ী,মাথার চুল ঝুঁটি করে বাঁধা,হাতে লাঠি, বয়সের ভারে কোঁচকানো চামড়ায় সারা মুখে সরু সরু বলি রেখা । প্রতি শনি মঙ্গলবারে ভর হয় নিজের কালী মন্দিরে, সকলে সমঝে চলে।বলা যায় না কখন কাকে বাণ মেরে মুখ দিয়ে রক্ত উঠিয়ে ছাড়বে। “ইটা তুমার কিমন বিচার হল গো মোড়ল”।
“কেনে, রেতের বেলায় সোমত্ত মেয়ে দাওয়ায় শুয়ে থাকে তাই বলে হারামজাদা……”।
হেমন্তর কথা শেষ করতে না দিয়ে হারানী গর্জে উঠল, “ ওই ছেমড়ীর কি কোন দোষ লাই, চিল্লাই নি কেনে,রেতের বেলায় বুধন রে আর কেউ দেখেনি তো মোড়ল, উইই কেবল চিনলো? ই কেমন বিচার?”
“ তা কেনে , পরদিন বুধন ওরে ভাগায়ে দিয়েছে , বিয়া করবে না বলে,তাই তো মজলিশ, এই বল না কি হইছিল?” সুলেখা একধারে মুখ নিচু করে বসে নখ দিয়ে মাটি খুঁটছিল।
“একবার তো কইলাম”।
হেমন্ত ধমকে ওঠে, “ আবার কইবি, দিদি কানে খাটো, শোনে লাই ভাল করে”।
“ দুদিন হৈল মা কুটুম বাড়ী গিইছিল, সুবোধ কাকাও শুতে আসে লাই ।অনেক রাত , দাওয়ায় ঘুমায়ে পড়চি, কুকুর গুলান খুব চিল্লাছিল, ঘুম ভেঙ্গে আমি সুজাগ, চোখ খুলি লাই, কিন্তু সুজাগ, শুখনো পাতায় খসখস আওয়াজ, কুকুর গুলান ছুটাছুটি করে। সুজাগ থাকলে কি হবে, চোখ তো খুলি লাই, হুড়মুড় করে বুকের ওপর উইঠ্যে মুখ চেপে ধইরেছে, বলল চুপ, চেল্লাবি না আমি বুধন”।
“ এত কথায় কাজ কি দিদি বুধন তো মেনে লিয়ছে”।
“ আমার তো বিয়া লিয়ে আপত্তি নাই,ও গুখেকোর বেটা যারে খুশি বিয়া করুক, খেতিপূরণ কেনে দেবে, ট্যাকা তো আমার।
“এটা কোন খেতিপূরণ লয় গো দিদি, ইটা ফাইন, বিচারী মজলিশে এটা দিতেই হৈব্য। বুধন মেনে লিয়েছে, বিয়া হৈব্য, ভোজ হৈব্য না, ই বা কিমন কথা, উ তো তোমার লাতি, তার বিয়া, ই তো তুমার কাছে আবদার গো দিদি” । এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে হেমন্ত সর্দার চেয়ারে গিয়ে বসল।
“ এ বিয়ার মুখে ঝাঁটা মারি, এ বিচার আমি মানি না গো মোড়ল, কাল থেকে বুধন বৌ লিয়ে ভেন্ন হয়ে থাকবে”। হারানী বরফের মতন ঠান্ডা চোখে সুলেখার দিকে তাকিয়ে ভয়ের একটা শক্ত ডেলা সুলেখার বুকের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে গেল।
নাথপুর গ্রামটা যূগীদের হলেও একটা গোটা পাড়ায় সর্দাররা থাকে। শহুরে হাওয়া, পঞ্চায়েতী ব্যবস্থা, সর্ব শিক্ষা অভিযানে সর্দাররা এখন আগেও চেয়ে অনেক সভ্য ভব্য। কারো কারো পাকা ঘরে টিনের চাল, কেবেল লাইন, নেতাগিরি করে কেউ কেউ। তবুও এখনো কিছু পুরানো রীতিনীতি আঁকড়ে রেখেছে। তারই মধ্যে এই বিচারী মজলিশ, পঞ্চায়েতের মেম্বারের চেয়ে গাঁয়ের বয়স্ক মোড়লই শেষ কথা বলবে। এসব টপকে থানা পুলিশ করতে গেলে অনর্থ তো বাঁধবেই, এখন চালু আছে একঘরে প্রথা।ভয়ে তাই কেউ কিছু বলে না।হারানী বুড়ি চলে গেলেও বিয়ের অনুষ্ঠানের জাঁকজমকের কোন হেরফের হল না। আরো কয়েকটা মুরগী, কয়েক জেরিকেন চোলাই যে কোথা থেকে এল সে হিসেব রাখার কথা নয় হেমন্ত সর্দারের। দুশো টাকা ট্যাঁকে গুঁজে বুঁধ হয়ে বসেছিল চেয়ারে।নেশা মাথায় উঠলে কি হবে বুধন কিন্তু তালে ঠিক আছে। সবাই যখন মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে,মেটে সিঁদুর সুলেখার কপালে ঘসে দেওয়া হয়ে গ্যাছে,গাঁদা ফুলের মালা গলায় থাকলো কি থাকলো না কিবা এসে যায় তাতে। সুলেখার নড়া ধরে টানতে টানতে ঘরে নিয়ে চলল। রাত এখন অনেকটাই বাকী, ফাঁক দিয়ে লাভ কি।
(২)
আজ মঙ্গল বার , হারানী বুড়ির ভর হবে সন্ধ্যাবেলা। বিকেল থেকেই দুয়ার লাগোয়া ছোট্ট কালী মন্দিরে বৌ ,ঝিয়েদের ভিড়, কেউ এসেছে বাচ্ছা ট্যাঁকে নিয়ে। হয় জলপড়া খাওয়াবে, কিম্বা হাওয়া বাতাস লাগলে ঝেঁড়ে দেবার বিধিব্যবস্থা আছে। মাদুলি তাবিজের সঙ্গে জড়িবুটির ওষুধও দেয় হারানী বুড়ি। এর পর আছে ওর ভরের মুখে অব্যর্থ ভবিষ্যদ্বাণী।শুকনো মুখে দাঁড়িয়ে থাকে সুলেখা।দাওয়ায় ওঠা বারণ। আর্দ্ধেক দিনই খাওয়া জোটে না তার। দিন মজুরের কি বা রোজগার, সবটাই চলে যায় মদের পেছনে।উপরি পাওনা শরীরের ওপর অত্যাচার। মাসখানেকের মধ্যেই শুকিয়ে গেছে সে। হারানী বুড়ির দুয়ারে জমা হচ্ছে, চাল, ডাল, সবজী আলু কলাটা মূলোটা যার যেমন সামর্থ্য।সুলেখা একই গ্রামের মেয়ে হলে হবে কি এখানে আসার আগে ভর কখনো দেখেনি। আসল কথা দরকার পড়নি কখনো, শুধু শুধু মজা দেখতে তো কেউ আসে না, এমনিতেই সুলেখার বাড়ীটা অনেকটা দূরে।সন্ধ্যে বেলা মা প্রায় দিনই বাড়ীতে থাকে না।তবে বুড়ীর ভর দেখার পর সবটাই কেমন যেন বুজরুকি বলে মনে হয় ওর।গ্রামের লোকেরা কত খাবার জিনিষ দিয়ে যায় বুড়ীকে। চাল, ডাল, সব্জী, কেউ কেউ মিষ্টিও নিয়ে আসে। এত জিনিষ দেখে চোখ লাগে সুলেখার,তবু বুড়ী প্রাণ ধরে কখনো দেয় না ওদের। একা মানুষের এত আখাবার জিনিষ কি কামে লাগবে কে জানে।মাঝে মাঝেই বুড়ী এদিক ওদিক কোথায় চলে যায়, ঘর ফাঁকা থাকে। চুরি চামারী করতে বাধো বাধো ঠেকে সুলেখার। দু’একটা জিনিষ সরালে বুড়ী বুঝতে পারবে বলে তো মনে হয় না তবু বলা তো যায় না। একে বিয়ের রাতেই ভয়ের ডেলা বুকের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিল নজর দিয়ে।তারপর রেবা সুলেখার সঙ্গে ইস্কুলে পড়ত, ছেলে কোলে নিয়ে এসেছিল সেদিন ঝাড়াতে।বলল, “ তোর দিদিশাশুড়ীটা কিন্তু ডান, সাবধানে থাকিস”।
ওই শুরু হয়ে গেল ঢোল পেটা, কাঁসরের কাঁইনানা। এবার বুড়ী ঘর থেকে বেরিয়ে আসবে লাল কাপড় পরে, দু’চারটে ফুল ছোঁড়া হলেই পূজো সারা হয়ে যাবে, ব্যস, সুরু হবে আরতি, সঙ্গে বুড়ীর মাথা চালা, শনের নুড়ির মতন চুল কখনো পিছনে কখনো মুখের ওপর ঝাপটা মারবে। কানে তালা ধরা ঢোল আর কাঁসরের আওয়াজ। এই বয়সে বুড়ী যে এত দম কোথা থেকে পায় সুলেখা বুঝে উঠতে পারে না। যে প্রথম বার দেখবে তার ভয় লেগে যাবে। এই বুঝি প্রাণ বায়ু বেরিয়ে গেল, তার বদলে দড়াম করে মেঝেতে পড়ে মুখ রগড়াতে থাকে।সঙ্গে সঙ্গে থেমে যাবে ঢোল কাঁসরের আওয়াজ।সকলেই মাথা নুইয়ে প্রণাম করবে হারানী বুড়িকে ঠাকুর জ্ঞানে। সুলেখা ঘর ঢুকে আসে। সন্ধ্যে হয়ে গেছে, কাপড় ছেড়ে তুলসীতলায় প্রদীপ দিয়ে শাঁখ বাজায়। কবেকার কে জানে পোড়া মাটির শাঁখ, আওয়াজ বেরুলেই হল।
মাটির হাঁড়িতে সামান্য দুটো চাল পড়ে আছে।ভাত রান্না হলে কার মুখেই বা দেবে আর কি দিয়েই বা খাবে। অন্ধকার দাওয়ায় চুপ করে বসে থাকে সুলেখা, নিঃশব্দ সন্ধ্যায় অস্পষ্ট শোনা যায় হারানী বুড়ীর খোঁনা গলার ভবিষ্যদ্বাণী। সন্ধ্যা পার হওয়ার সাথে সাথে থেমে যায় জমায়েত হওয়া বৌ ঝিয়েদের গুঞ্জন।ভর ভেঙ্গে ঘর ঢোকে হারানী বুড়ী, ঘরের ভিতরের হারিকেনের আলোয় বুড়ীর ছায়া পিছনের খোলা দরজা দিয়ে বাইরে এসে পড়ে। সুলেখা সেদিকে তাকিয়ে থাকে খানিকক্ষণের জন্যে। সে জানে এর পর ভেসে আসবে ভাত রান্নার গন্ধ।প্রাণ ভরে নিশ্বাস নেয়। একসময় ওই হারিকেনের আলোও নিভে যাবে।রাতের অন্ধকার আরো গাঢ় হয়ে নেমে আসবে, একলা সুলেখা বসে থাকতে থাকতে ক্ষিদে, তেষ্টায় ওই দাওয়াতেই শুয়ে পড়বে। কোন কোন দিন এই ভাবেই রাত কেটে যায়,আবার কখনো মাঝ রাতে বুধন এসে হামলে পড়ে খিদে তেষ্টায় ক্লান্ত শরীরটার ওপর। আজ আর সেরকম কিছু হল না। হঠাৎই সুলেখা হারানী বুড়ীর মত মাথা চালতে শুরু করল। কানে ভেসে আসছে তার তখনকার শোনা ঢোল কাঁসির আওয়াজ। উঠানের ওপর উঠে দাঁড়িয়ে পড়ছে সে । মাথার এলো চুল কখনো সামনে, কখনো পিছনে, ঝাপটা মারছে। শাড়ী আঁচল গা থেকে খসে পড়ছে মাটিতে। আদুল গায়ে অন্ধকারে উঠানের ওপর সুলেখার এই নিরলস পরিশ্রম ভর হওয়ার জন্যে।একদিন সেও হারানী বুড়ির মত অলৌকিক ক্ষমতা পেয়ে যাবে। এই বিশ্বাসে তার মনে হয়েছে থামলে চলবে না।অন্ধকার আকাশের দিকে চেয়ে দুলতে থেকে আগের চেয়ে জোরে অনেক জোরে।একসময় ধড়াস করে মাটিতে পড়ে যায়। চোখের সামনে ভেসে ওঠে লাল নীল সবুজ আলোর বিন্দু।তারই মধ্যে সে যেন দেখতে পায় অদূর ভবিষ্যতের ছবি। তারপরেরই গাঢ় অন্ধকার ঢেকে ফেলে সব কিছু।
( ৩)
সকালে রাস্তার কলে জল আনতে গিয়ে কথাটা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল সুলেখার। রেবার ছেলেটা বমি পাইখানা হয়ে মারা গেছে।এদিকে ক’দিন থেকেই টের পাচ্ছে নিজের শরীরের ভেতরে নতুন একটা জীবনের মাথা চাড়া দেবার আভাস। তখন থেকেই একটা নতুন অনুভূতি তৈরী হচ্ছে মনের ভেতর। কেমন যেন একটা মায়া, ছোট ছেলে মেয়ে দেখলেই তাকে জড়িয়ে ধরে নিজের শরীরের মধ্যে বেড়ে ওঠা নতুন জীবনটার অস্তিত্ব অনুভব করতে চায়। তাই যখনই এই খারাপ খবরটা শুনলো তার নিজের শরীরের ভেতরের ভ্রুনটাকে বাঁচিয়ে রাখার একটা নতুন তাগিদ অনুভব করতে লাগল। কিন্তু তার এই কথা প্রাণ ভোরে শোনার মত সংসারে কেউ নেই। মা বেঁচেছে বিয়ে হয়ে যেতে। বুধন যখনই শুনেছে, সেদিন থেকে ঘরে আসা বন্ধ করে দিয়েছে কাজের দোহাই দিয়ে। নদীর ধারে ইট ভাটায় কাজ পেয়েছে, সেখানে নাকি কুলী লাইনে থাকতেই হবে। আসলে তা নয়, এখান থেকে অনেকেই কাজ করতে গিয়েছিল, কিন্তু খাটুনির ঠেলায় পালিয়ে এসেছে প্রায় সবাই। দু’ একজনই টিঁকে আছে। এক কামীনের সঙ্গে বুধনের খুব ভাব, রঞ্জা বলছিল, সুলেখার নাকি কপাল পুড়ল। কপাল তো তার পুড়েই আছে নতুন করে আর কি পুড়বে এই পোড়া কপাল। মনে মনে সে ঠিক করে রেখেছে এই ঘর ছেড়ে কোথাও যাবে না। শুধু তার নিজের জন্যে নয়, যে প্রাণটা সাড়া দিচ্ছে, সেটা কে বাঁচিয়ে রাখতে তাকে সব কিছু করতে হবে।
হঠাৎই তার কানে এল ঢোলের আওয়াজ। অসময়ে ঢোলের আওয়াজ কেন, কি এমন ঘটল ঘুরে ঘুরে জানান দিতে হবে। ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরে দাঁড়ায় সুলেখা, কাউকে দেখতে পায় না, ঢোল বোধহয় গাঁয়ের ভেতরে ঢুকে গেছে। আওয়াজও আর ভালো করে শোনা যাচ্ছে না। তবু সুলেখা দাঁড়িয়ে থাকে রাস্তার দিকে তাকিয়ে ঘরে তার তেমন কাজ কর্ম নেই। শুধু দুমুঠো চাল ফোটানো। হারানী বুড়ী যখন পুকুর ঘাটে চান করতে গেসলো নিজের পেটেরটার কথা চিন্তা করে সাহসে ভর করে দুমুঠো চাল এক মুঠো ডাল আর দূটো আলু চুরি করে এসেছে। বেশী নিতে ভরসা হয়নি। যদি ধরা পড়ে যায়।তাড়াতাড়ি রান্না করে নিতে হবে বুড়ী ফেররার আগে,ভাত ফোটার গন্ধ পেয়ে যদি তল্লাশী করতে আসে, দেরী করতে ভরসা পায় না সুলেখা। সারাদিন তার এই ভাবেই কেটে যায়।
সন্ধ্যেবেলায় সবে তুলসীতলায় প্রদীপ দেখিয়ে শাঁখ বাজানো শেষ করে পেন্নাম সারতে সারতেই শুনতে পেল একটা শোরগোল, আস্তে আস্তে জোর হচ্ছে। দরজা খুলতেই দেখতে পেল কুড়ি পঁচিশ জন লোক হারিকেন নিয়ে চীৎকার চেঁচামেছি করতে করতে ওদের বাড়ীর দিকেই এগিয়ে আসছে। ভয় পেয়ে গেল সুলেখা, লোক গুলো আর কোন দিকে না তাকিয়ে, সোজা হারানীবুড়ীর দাওয়ায় উঠে দুড়মুড় করে ঘরের মধ্যে ঢুকে বুড়ীর নড়া ধরে টানতে টানতে কোথায় নিয়ে চলেছে। জিজ্ঞেসে করতে গিয়ে ধমক খেল সে । গাঁয়ের ছেলে বুড়ো বৌ ঝিঁ অনেকেই জড় হয়েছে। সুমিত্রা মাসিকে দেখে সুলেখা জিজ্ঞাসা করল,” কি হইছে গো মাসি, দিঠাকরুণ রে কুথায় লিয়ে গেল”। “শুনিস লাই রেবার ছেলেটারে ডানে খাইসে, হারানীখুড়ীর বিচার হৈব্য”।
“মাইরা ফেলবে নাতো”।
“তা কে জানে, ডান বলে কথা”।
(৪)
আজ মঙ্গলবারের সন্ধ্যা, পশ্চিম আকাশে পঞ্চমীর শীতল চাঁদের মরা আলোয় শুনশান এলাকা। গাঁয়ে ঘরে কোথাও পুরুষ মানুষ নেই, মাঝের পাড়ায় পুলিশ ক্যাম্প বসেছে।গাঁয়ের লোকজনের চরম হেনস্থায়, আর মারধোরে আহত হারানী বুড়ী নেড়া মাথায় এখন হাসপাতালে। তার নির্জন কালীমন্দিরে হারিকেনের আলোয় একলা সুলেখা শরীর দুলিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে বিরামহীন চেষ্টা করে চলেছে ভর হবার।