সুধাময় পুলিশে খুব সামান্য রাঙ্ক এ চাকরী করে, নিজের ক্ষমতা সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। সেটা যে কাউকে দেখানোর জিনিষ নয়, তা সে ভাল করেই জানে। সেইজন্যেই এই চাকরী থেকে দিনগত পাপক্ষয় ছাড়া অতিরিক্ত তেমন কিছু চিন্তা ভাবনার মধ্যে ছিল না। অথচ তারই সঙ্গে চাকরী করে এমন অনেক’কে অনেক কিছু করতে দেখলেও অসূয়াবশতঃ সেই প্রতিযোগিতায় নামার কথা কখনো ভাবেনি। হঠাৎ করে তার এক ব্যারাম উপস্থিত হয়েছে , ঝাঁ চকচকে একটা মোটর গাড়ী কেনার ইচ্ছে।অথচ এটা হবার কোন কারণই ছিল না, কেমন করে হল, সেটা কিন্তু একটু বিস্তারিত বলতে হবে। একটা ঘটনাটা দেখার পর সব কিছু যেন ওলট পালট হয়ে গিয়েছিল সুধাময়ের। তারপর থেকেই আর অন্য কোন চিন্তা নেই তার মাথায়।
সুধাময় একজন এ্যাসিস্টেন্ট সাব ইন্সপেক্টর অফ পুলিশ, সংক্ষেপে এ এস আই। এই র্যা ঙ্কে চাকরি করে মোটর গাড়ী কিনব বললেই তো আর কেনা যায় না, যদিও আজকাল ইএম আই সুবিধা হয়েছে, অধিকাংশ লোকই গাড়ী কেনে এই ভরসাতেই। কিন্তু মাসে মাসে গাড়ীর টাকাটা যোগান দেবার ধক থাকতে হবে তো। ইচ্ছেটা যতই ঘুনপোকার মতন কুরে কুরে খাক না কেন, সেটাকে বাস্তবায়িত করার কোন পরিকল্পনা তার মগজে নেই। কাউকে মন খুলে এসব কথা তো বলতেও পারে না, কে কি ভাববে, ঘোড়া রোগ বলে ব্যঙ্গ করতে পারে। তাই মনের ইচ্ছে মনের মধ্যে রেখে দেবার অস্বস্তিটা তার থেকেই যায়।
মাস পাঁচেক আগে সুধাময় একবার কি একটা দরকারে যেন পুলিশ অফিসে গিয়েছিল। একজন এএসআই’র এমন কি আর কাজ থাকতে পারে, সেসব মিটে গিয়েছিল অনেকক্ষণ। টিএ ক্লার্কের সঙ্গে একটু খেজুরে গল্প করছিল, টিএ, বিল কবে বেরুবে সেটা জানার জন্যে। চা’টা খাইয়ে সবেমাত্র করিডোরে পা দিয়েছে, এসপি সাহেবের কালো ইনোভা গাড়ীটা এসে থামল। সিঁটিয়ে দেয়ালের দিকে সরে গিয়েছিল সুধাময়। সাধারণতঃ সিকিউরিটি নেমে সাহেবের গাড়ীর দরজাটা খুলে দেয় কিন্তু একি সিকিউরিটি নামার আগেই সাহেব ঘটাং করে গাড়ীর দরজা খুলে নেমেই ব্যাক হিল করে দরজাটা বন্ধ করে তরতর করে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে এসেছিলেন, কুঁচকানো কপালে অসম্ভব বিরক্তি মাখা ছিল। যদিও সুধাময় সাহেবের চোখে পড়ার কথা নয় তবুও একটু দূর থেকে সে একটা কড়া স্যালুট করেছিল, সেদিকে দৃষ্টিপাত না করে দ্রুত পায়ে এসপি সাহেব চেম্বারে ঢুকে গিয়েছিলেন, এরপর মূর্হুঃমুর্হুঃ কলিংবেল বাজছিল, বেচারা অফিস ডিউটি কনেস্টেবল একবার করে দরজা ঠেলে চেম্বারে ঢুকছে, আর দূড় দূড় পায়ে ছুটছে কাউকে না কাউকে ডাকতে। পরিস্থিতি যে গোলমেলে সেটা আন্দাজ করতে অসুবিধে হয়নি সুধাময়ের। আর এক মুহুর্ত দেরী করেনি সে । সামান্য এ এস আই’র এসপির চেম্বারে ডাক পড়ার কথা নয় , তবুও সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা সমীচীন মনে হয়নি তার।
তারপর থেকেই ব্যাক্ হিল করে দরজা বন্ধ করাটা তার মাথায় ঢুকে গেল। যে কোন একটা গাড়ী দেখলেই মনে হত একবারের জন্যেও যদি সেটা থেকে নেমে বাঁপায়ের ধাক্কায় দড়াম করে দরজা বন্ধ করতে পারত, তাহলে আর কোন চাহিদা থাকত না। সেই থেকে এই ছবিটা মনের আনাচে কানাচে প্রায়ই ঘুরত । ঠান্ডা মাথায় অনেকবারই ভেবে দেখেছে রাজকীয় পদমর্যাদা না থাকলে কি আর এই ভাবে ক্ষমতা দেখানো মানায়। সুধাময়ের যে সেটা নেই তা সে ভাল করেই জানে, ইহজন্মে সেটা হবারও কোন সম্ভবনা নেই। ভাবনাটা মন থেকে তাড়াবার চেষ্টা যে করেনি তা নয়, কিন্তু মন কি আর কারুর বশে থাকে, যে লাগাম টেনে রোধ করা যাবে । একলা ঘরে থাকলে বাঁ’পা দিয়ে ধাক্কা মারাটা প্র্যাকটিশের মধ্যে রাখে, বলা তো যায় না যদি একটা চারচাকার গাড়ী তার নিজের হয়, পুরুষের ভাগ্য আর নারীর মন কখন যে পরিবর্তন হয় কে’ই বা বলতে পারে । সেই ঘটনা থেকেই তার নিজস্ব একটা গাড়ির ভারি শখ। নড়বড়ে সাইকেলের স্ট্যান্ড পা দিয়ে ওঠাতে ওঠাতে এই কথাগুলো ভাবছিল সে।
কনেস্টবলের চাকরীটা পেয়ে যাওয়ায় পার্ট ওয়ানের পরীক্ষা দেওয়া হয়নি সুধাময়ের, পনেরো বছর পর প্রমোশন, এ্যাসিস্টেন্ট সাব ইন্সপেক্টর, সেও হয়ে গেল আট বছর। খান তিনেক থানা খাটা হয়ে গেছে,তবে একথা ঠিক সে একশো ভাগ সৎ,তা কিন্তু মোটেই নয়, পয়সা কড়ি হাতে পেলে ভালই লাগে, কিন্তু মুখ ফুটে টাকা পয়সার কথা কারুর কাছে বলতে পারে না। একজন এ এস আই এর ক্ষমতাই বা কি। কেনই বা লোকে ঘুস দেবে তাকে, কি উপকারই বা সে করতে পারে। ঘুস নিলেই যে তার বিনিময়ে উপকার করতে হবে, এমন কথা অবশ্য পুলিশকে কেউ বলে দেয়নি। তবু সুধাময়ের মনে হয় কারুর কাছ থেকে কিছু নিলে দায়বদ্ধতা থেকেই যায়, তবে ভালবেসে সেধে কেউ কলাটা মুলোটা মুরগী খান’কতক ডিম বা শতখানেক টাকায় মিষ্টি খেতে দিলে অবশ্য আলাদা কথা। তবে এভাবে চললে তার মোটরগাড়ী কেনা হবে না কোনদিনই। সেটা না হলে কি করেই বা সে ব্যক্ হিল করে গাড়ীর দরজা বন্ধ করবে। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই কয়েকটা দিন কেটে যাবার পরই তার বদলীর অর্ডার এসে যায় । এবার আর থানায় নয়, যে থানায় ছিলো তারই একটা রুর্যাঅল আউট পোস্টে, ইনচার্জ হিসাবে। ইনচার্জ হলে কি হবে সেই আউট পোস্টটা একেবারে নির্বান্ধব পুরীতে। সচারচর সেখানে কেউ যেতে চায় না। গাড়ীতে গেলে সাতাশ আঠাশ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। না হলে বাসে দশ কিলোমিটার দূরে অর্জুনপুরের মোড়, সেখান থেকে পায়ে হেঁটে মাহিন্দারের ঘাট, একটা খাঁড়ি নদী পার হয়ে তিন কিলোমিটার কাঁচা রাস্তায় হেঁটে ফাঁড়িতে পৌঁছানো। পুলিশের চাকরীতে আরাম তো দূরের কথা সামান্য অবসরেরও সুযোগ নেই। হয় জলে, কাদায়, নয় তীব্র রোদে, কিংবা দারুণ শীতে রাতের অন্ধকারে কর্তব্য পালন করতে হয়। না আছে ঘুমিয়ে সুখ না আছে দু’মুঠো খেয়ে শান্তি।
মনটা খারাপ হয়ে গেল সুধাময়ের, নিজে সে ভাল করেই জানে তার হয়ে তদবীর করার মত কেউ নেই, সুতরাং সুধাময়’কে ওখানে যেতেই হবে। পুলিশে চাকরী করতে এসে সে একটা জিনিষ বুঝতে পেরেছে, ধরাকরার লোক না থাকলে মনোমত জায়গায় পোস্টিং হয় না। বদলীর লিস্টটা দেখলেই বোঝা যায় সুধাময়ের মত অনাথের সংখ্যা খুবই কম। বছর পাঁচেক কনেস্টেবলের চাকরী করার পরই বিয়ে করেছিল সুধাময়। তখন সদর থানায় পোস্টিং। সেখানেই ছোট একটা কোয়ার্টার পেয়েছিল সেইসময়,কাজে কর্মে প্রায়ই তো হেড-কোয়ার্টারে যেতে হয় তাই সেটা আর ছাড়েনি। ছেলেটা একটু বড় হতেই তাকে মামার বাড়ী পাঠিয়ে দিয়েছিল বউ, ওর ধারণা থানা কোয়ার্টারে থাকলে ছেলে মানুষ হবে না। কথাটা খুব মিথ্যে নয়, তাই আপত্তি করেনি, ওখানেই পড়াশুনা করছে, খুব খারাপ নয় পড়াশুনায়। এখানে ওখানে হুটহাট করে বদলী হলে ,তার পড়াশুনোও ঠিক মত হবে না, তারপর সেখানে না আছে থাকার জায়গা, না আছে খাওয়ার ঠিক। একলা থাকলে এই সুবিধে, কনেস্টবলদের সাথে ব্যারাকে একটা লোহার খাট মিলবে, ওদের সঙ্গেই মেসে যাহোক দুবেলা দুমুঠো জুটে যাবে। যেহেতু নিজেও একসময় কনেস্টবল ছিল তাই মেলামেশার দিক থেকে কোন আপত্তি ছিল না সুধাময়ের। কিন্তু ফ্যামিলি থাকলে নানান অসুবিধে, তাই সুধাময় আর ওই রাস্তায় হাঁটেনি।
ফাঁড়িতে জয়েন করার দিন খুবই অসুবিধে হয়েছিল সুধাময়ের। সাইকেলের কেরিয়ারে ট্রাংক, বেডিং, পিঠে একটা ব্যাগ নিয়ে নৌকোতে উঠে নদী পার হবার পর আর নামাতে পারে না, যদিও বা মাঝির সাহায্যে কোনক্রমে রাস্তায় তোলা গেল, সারা রাস্তা সাইকেলটা হাঁটাতে হাঁটাতে নিয়ে যেতে হল। ফাঁড়িতে পৌঁছনোর পর সুরেশ বলছিল,-“স্যার খবর দিলেন না কেন আমরা দুজন ঘাটে চলে যেতাম”। এত কিছু সুধাময়ের মাথায় খেলেনি। খবরই বা দেবে কি করে। ফাঁড়িতে তো আর টেলিফোন নেই। খবর দিতে হলে থানা থেকে ওয়্যারলেস’এ জানাতে হত। তখন যদি কোন সাহেব আবার এয়ারে(air) থাকে তাহলে হয়েছে আর কি।
যাইহোক জায়গাটা মন্দ নয়। চার পাশে কোন বসতি নেই। ফাঁড়ির বিল্ডিংটা পাকা। একসময় গ্রামীন হাসপাতাল হবার কথা ছিল এই বিল্ডিংএ । যোগাযোগের এই ব্যবস্থার জন্যে হেলথ ডিপার্টমেন্টের গ্রামীন হাসপাতাল চালু করার ব্যাপারে খুব একটা উদ্যোগ দেখায় নি। ফাঁকাই পড়েছিল অনেক দিন, পর পর দুটো ডাকাতি হবার পর, হাসপাতালে সেই ফাঁকা বিল্ডিং’এ পুলিশ ক্যাম্প বসে। যেহেতু থানা থেকে এত দূর পরে পাকাপাকি ভাবে পুলিশ ফাঁড়ি চালু হয়ে যায়।
সামনে খানিকটা খোলা মাঠ কনস্টেবলরা বেড়া দিয়ে খানিকটা জায়গায় সব্জী ফলায়। সেরকম বাজার হাট তো নেই এখানে। মুদিখানার ছোট্ট দোকানে আলু, পেঁয়াজ, আদা, ডিম পাওয়া যায়। জেলেরা এই পথ দিয়ে গেলে চারা মাছ বা পাঁচমিশালি চুনো মাছ কেনা হয়, আর যদি কোনদিন দেশী মুরগীর ঝোল হল, তাহলে তো উৎসব।
ফাঁড়ির সামনে খানিকটা রোয়াক, সেখানেই রোদে পিঠ দিয়ে একটা চেয়ার নিয়ে বসে থাকে সুধাময়। লোকজন তেমন কেউ আসে না, সারাদিনে কখনো সখনো রেশন কার্ড হারানোর বা ছোটখাট মারামারি, গালিগালাজ দেবার ডায়রী। কাজ কর্মের এমন কিছু চাপ নেই, বড় গন্ডগোল সব পার্টি অফিসেই মিটমাট হয়ে যায়, ফাঁড়ি পর্যন্ত আসা দরকার হয় না। রোয়াকের একপাশে বাঁশের ফ্রেমের ওপর একটা ক্যারাম বোর্ড পাতা আছে, কনেস্টবলরা সারাক্ষণই ঠকাশ ঠকাশ করে পিটেই চলেছে, কাজ না থাকলে যা হয়। রাতে নাম-কা ওয়াস্তে নাইট পেট্রল, পায়ে হেঁটে দু’তিনটে গ্রাম ঘুরে এসে শুয়ে পড়া। এখন তো আর আগের মত চুরি ডাকাতিও নেই, কেউই আর ঘরে টাকা পয়সা গয়নাগাটি রাখে না। সময় কাটানোই মুস্কিল, সুধাময় একটা খবরের কাগজ রাখার কথা বলেছিল, কনেস্টেবলরা রাজি হয়নি। দু’ চারটে চোলাই’ এর ঠেক আর কয়েকটা তাড়ির কারবারিদের কাছ সামান্য কিছু টাকা মাসোহারা ওঠে। সুধাময় ভাগের ভাগ পাবে সাতচল্লিশ টাকা, এরপর সেই টাকা দিয়ে খবরের কাগজ কিনলে ক’টাকাই বা জুটবে মাসের শেষে। কথাটা ভেবে দেখে সুধাময় আর জোরাজুরি করেনি। থানায় তবু গাড়ী ঘোড়া চোখে পড়ত, চার চাকা দেখলেই সুপ্ত ইচ্ছাটা মাথা চাড়া দিত, তাতেই ছিল সুধাময়ের একরকম তৃপ্তি। এখানে একটা গাড়ীও চোখে পড়ে না।
থানায় থাকতে ভাত খাবার পর একটু গড়িয়ে নিত,এখানে সারাদিনই বিশ্রাম, তাই লুঙ্গী পরে খালি গায়ে চাদর জড়িয়ে বসে থাকে,সাত পাঁচ ভাবে, মনের মধ্যে কাঁটা ফোটার খচখচানির মত অশান্তি। হরিসাধনরা ক্যারাম খেলছিল, বসে থাকতে থাকতে সুধাময় তাকেই ডাক দেয়,-“ হরি এখানে কারুর গাড়ী নেই?” “আছে তো ঘরে ঘরেই টুহুইলার, আপনিও স্যার একটা কিনে নেন, তদন্তে যেতে সুবিধা হবে”। “দূর আমি চার চাকার কথা বলছি”। “ চার চাকা এখানে চলবে কোথায় স্যার একটাই ব্রিক সোলিং রাস্তা, বাদবাকি সবই কাঁচা,শীতকালে কাঁচা রাস্তায় একবার গাড়ী উঠলে হল, ধুলোর ঝড় পিছন পিছন তাড়া করে ফিরবে, আর বর্ষাকালে সে কথা না বলাই ভাল!” নিজের কথায় নিজেই হেসে ফেলে হরিসাধন। “একটাই টাটা সুমো অবশ্য আছে নৃপেন বিশ্বাসের, ফেরী ঘাটে বাঁপাশের পাকা বাড়ীটা ওদের। গাড়ীটা পড়েই থাকে উঠানে ঢাকা দেওয়া অবস্থায়। নৃপেন বিশ্বাস আরবে না কুয়েতে কি করে ভগবানই জানে, তবে মেলা পয়সা, শীতকালে এলে গাড়ীটা নিয়ে বেড়াতে যায় এবার এখনো কেন আসেনি কে জানে”। “এত দিন পড়ে থাকে স্টার্ট হয়”! “ হয় বৈকি স্যার, সে আর এক ঘটনা , একটা ছেলে আছে, রোজ এসে শুধু তো স্টার্টই দেয় না আরো অনেক কিছু, আস্তে আস্তে সব জানতে পারবেন স্যার”। মিটি মিটি হাসছিল হরিসাধন।
“ওপারে গেলে সাইকেলটা তো ওদের ঘরেই রাখি, একদিন যাবেন পরিচয় করিয়ে দেব”। সুধাময় আর কিছু বলে না। এর বেশী আর কিছু জানতেও চায় না সেটা যখন সে ধীরে ধীরে জানতে পারবেই, এত কৌতুহলেরই বা দরকার কি। যেটুকু বলেছে তারপরে তো আর জানার কিছু বাকী থাকেনা। ছোকরা কনেস্টেবল, বেশী কথাবার্তা বললে লাই পেলে মাথায় চড়ে বসবে। পুলিশের বিনোদন বলতে হয় পয়সার ধান্দা নয়তো কারো নারীঘটিত কেচ্ছা নিয়ে মুখরোচক আলোচনা। চিরদিনই সুধাময় এসব এড়িয়ে এসেছে। বেশ খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে কথা ঘোরানোর জন্যেই বলল, “এখানে তো সময় কাটানোই মুস্কিল”। “পানিশমেন্ট পোস্টিং কি আর সাধে বলেছে স্যার”। ক্যারাম খেলতে খেলতে উত্তরটা কেউ একজন ছুঁড়ে দিল।
দুপুর বেলায় ঘুঘুর ডাকে সময় কাটে, আর রাতের বেলায় অধিকাংশ দিনই লোডশেডিং, আকাশে যদি সামান্য মেঘ দেখা দিল তাহলে তো সারা রাতেই কারেন্ট আসবে না। হারিকেন জ্বালিয়ে শিয়ালের ডাক আর ছাতিম ফুলের গন্ধ শোঁকা। এখন ঠান্ডা পড়ছে ঘুমিয়ে পড়তে দেরী হয় না। সুধাময় বুঝতেই পারছে গরমকালে ফাঁড়ির রকে বসে হাতপাখা নাড়তে হবে মশা তাড়ানোর কয়েল জ্বালিয়ে। পুরানো সাদাকালো পোর্টেবেল টিভি একটা আছে বটে, কারেন্ট না থাকলে চলবে কিসে। গামছা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মাছি তাড়াচ্ছিল সুধাময়। বড়ই মাছির উপদ্রব দিনের বেলায় , রাতে সেইরকম মশা, মশারি না খাটালে নিস্তার নেই। এখানে আর কিছু দিন থাকলে গাড়ী কেনার সাধটা আপনা আপনিই ধামাচাপা পড়ে যাবে।
কথাটা মনে হতেই দূর থেকে একটা হর্ণ শুনতে পেল, প্রথমে ভেবেছিল মনে্র ভুল, পরক্ষণেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতেই বেশ কিছুটা দূরের রাস্তায় চোখে পড়ল দুটো গাড়ী, কালো রঙের ইনোভা দেখেই চিনে ফেলেছে, এসপি সাহেবের না হয়ে যায় না। তাড়াতাড়ি কনস্টেবলদের ক্যারাম বোর্ড গুটিয়ে নিতে বলে, সেন্ট্রীকে চাপা গলায় ঠিক মত সেলামী দেবার নির্দেশ দিয়ে, ছুটল ইউনিফর্ম লাগাতে। বুকটা ধড়াস ধড়াস করছে, আজ পর্যন্ত কোন এসপি সাহেব এই ফাঁড়িতে এসেছে কিনা জানা নেই। কোন দোষ ত্রুটি তো করেনি, করলে তো তারই ডাক পড়ত, এসপি সাহেব নিজে ছুটে আসত নাকি।
যতই তাড়াতাড়ি করুক সুধাময়, ইউনিফর্ম পরে হাজির হতে হতে দুটো গাড়ী ততক্ষনে ফাঁড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেছে। সিভিল পোষাকে থাকলেও তিনি যে জেলার এসপি সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে এসে সুধাময় এক কড়া স্যালুট দিয়ে সাবধান হয়ে দাঁড়ল এসপি সাহেবের সামনে। সুধাময়কে একবার আপাদমস্তক দেখে নিয়ে প্রশ্ন করলেন, “কি ঘুমাচ্ছিলে নাকি?” “না স্যার”। শুকনো গলায় স্যার কথাটা কেমন যেন জড়িয়ে গেল।
মুখার্জ্জি সাহেব কে চেনো”? এবার সুধাময় কথা না বলে একবার দেখে নিয়ে ঘাড় নাড়ল।
“ উনি মালদার জেলা জজ”সঙ্গে সঙ্গে সুধাময় ঘুরে গিয়ে জজসাহেবকেও একটা স্যালুট দিল। “মুখার্জি সাহেবের একটা বাগানবাড়ী আছে জানো”। এসপি সাহেবের কথা শুনে ঘাবড়ে গেছে সুধাময়, খুব বেশী দিন যে এখানে বদলী হয়ে এসেছে তা নয়। বাগানবাড়ী বলতে মনে পড়ল ব্যারাকে একদিন বিশ্বনাথ বলছিল রসিকপুরে জজসাহেবের বাগানবাড়ীর কথা । উত্তর দিতে সামান্য দেরী হয়ে গেল তার, শুকনো ঠোঁটে জিভ বুলিয়ে নিয়ে বলল “রসিকপুরে?” “ তুমি কি আমাকে জিজ্ঞাসা করছ”? উত্তর দিতে গিয়ে সুধাময় এমনভাবে বলেছে কথাটা এসপি সাহেবের কাছে প্রশ্ন বলেই মনে হয়েছে। ধড়াস করে উঠেছে তার বুকটা। এযাত্রায় জজসাহেবই রক্ষা করলেন সুধাময়কে। “হ্যাঁ, হ্যাঁ ও ঠিকই বলেছে”। বুকের ধড়ফড়ানিটা এখনো অনুভব হচ্ছে। জজসাহেব হেসেই ফেলেন সুধাময়ের অপ্রস্তুত অবস্থা দেখে।
“শোন সামনের রবিবার মুখার্জি সাহেবের বাগানবাড়ীতে আমাদের পিকনিক, মহিলারাও থাকবেন, কয়েকজন ফোর্স, হোমগার্ড নিয়ে ওখানে হাজির থেকো। আজকে এসেছিলাম জায়গাটা দেখতে, তাই ফাঁড়িটা ঘুরে গেলাম, মনে থাকে যেন, সকাল সকাল চলে যেও”। সম্ভবতঃ জজসাহেবের স্ত্রী’ই হবেন উনি, গাড়ী থেকে নেমে কনেস্টবলদের সব্জী বাগান দেখছিলেন। সুধাময়ের একবার মনে হল বাগান থেকে দুটো ফুলকপি তুলে দেবে কিনা। কিন্তু সাহসে কুলালো না। গাড়ীতে উঠে দুজনেই বিদায় নিলেন, শীতকালেও ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল সুধাময়ের। শুধু জেলার এসপি নয় সঙ্গে সঙ্গে জেলা জজ। রবিবার দিন আবার না জানি কি কপালে আছে। সাত পাঁচ ভাবতে হঠাৎ খেয়াল হল দুটো গাড়ীরই দরজা দুটো হাট পাট করে খোলা ছিল। কিন্তু একবারের জন্যেও মনে হয়নি পায়ের ঠেলায় দরজা দুটো বন্ধ করার কথা।
(২)
রবিবার মুখার্জি সাহেবের বাগানবাড়ী সকাল থেকেই সরগরম, চারখানা গাড়ী এসেছে। সাহেবদের সঙ্গে মেমসাহেবরা তো আছেই, আরো অনেকে এসেছে, মহিলা পুরুষ মিলিয়ে প্রায় জনা দশ বারো। সুধাময় অবশ্য সাহেবরা আসার আগেই ওখানে পৌঁছে গিয়েছিল। সাহেবরা আসতে স্যালুট করে দাঁড়াতেই এসপি সাহেব খুশী হয়ে সুধাময়ের কাঁধে চাপড় মেরে বললেন “ আরে সুধাময় বাবু তুমি এসে গেছে দেখছি, ভেরী গুড”। বুক ফুলে উঠেছিল সুধাময়ের এর আগে কোন সাহেব কখনো প্রশংসা করেনি। সাহেব তার নাম জানেন এটা কি কম বড় কথা। এই ফাঁড়িতে পোস্টিং হয়েছিল বলে একসময় দুঃখ করে ছিল, থানায় থাকলে যত ভালই কাজ করুক না কেন, সাব-ইন্সপেক্টরদেরই ভাল কাজের ক্রেডিটটা বড়বাবুই নিয়ে নেন । তার মতন ক্ষুদ্র এএসআই তো কোন ছার। থানায় চাকরী তো আর সুধাময়ের কম দিন হল না।
শীতকালের মিষ্টি রোদ, ঘাসের শিশির এখনো মরেনি। সকলেই বেশ খুশী খুশী মনে হচ্ছে। জায়গাটাও চমৎকার। বড় বড় ছাতা পোঁতা হয়েছে বাংলোর সামনের লনে। বেতের চেয়ার টেবিল, সুন্দর টি’সেটে চায়ের ব্যবস্থা। স্যান্ডউইজ, কেক বিস্কুট, ডিম কমলালেবু আরো কত কি। এসপি সাহেব খুব মেজাজে রয়েছেন।হাল্কা চালে পায়চারী করতে করতে গুনগুন করে গান করছে। সুধাময়ের দিকে চোখ পড়তেই বললেন “তোমরা চা জলখাবার খেয়েছ?” সকাল থেকে যে তাদের কিছুই খাওয়া হয়নি সে কথা বলতে পারছে না। সাহেবও উওরের অপেক্ষা না করে ওদের চা জলখাবার দিতে বললেন। চিকেন স্যান্ডউইচ এর আগে কখনো খাওয়া হয়নি সুধাময়ের। বাসি রুটি, শুকনো পাঁউরুটি কিংবা মুড়ি, এই হল তার সকালের জলখাবার। স্যান্ডউইচ কিংবা পিজ্জা দেখেছে বটে তবে কিনে খাবার কথা কখনো মনেও আসেনি। এসব কিনে খাওয়া মানে নেহাতই পয়সা নষ্ট বলেই জানত এতদিন ,এবার ছেলেটা বাড়ি এলে একদিন না হয় কিনে নিয়ে যাবে । আহাহা কি চায়ের স্বাদ, মনে হয় শেষ যেন না হয়। এই না হলে সাহেব, কতদিকে দৃষ্টি।
খাওয়া শেষ হলে সুধাময়ের মনে হল, তাকে কেউ কোন দায়িত্ব দিচ্ছে না। হোমগার্ডরা রান্নার কাজে সাহায্য করছে। গেটে দুজন কনেস্টেবলকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, বলা তো যায় না পিকনিক দেখে ভিখিরির দল যদি জোটে। তিন চারটে কুকুর ঘোরাঘুরি করছিল,খাওয়া দাওয়ার গন্ধ পেয়ে। সুধাময় নিজেই তাদের তাড়িয়ে বাগান বাড়ীর সীমানা পার করে দিয়ে এল। দিলে কি হবে ওদিক দিয়ে আবার একটা ঢুকছে। একবার দৌড়ে ওদিকে যায় আবার অন্য দিকে ছুটতে হয়। আজ কাজ করার একটা আলাদা জোশ পেয়ে গেছে সুধাময়। হঠাৎই কানে এল বড়সাহেবের সিকিউরিটির গলা “ ও ছোটবাবু, বড়সাহেব ডাকছেন”। বুকটা ধড়াস করে উঠল সুধাময়ের। আবার কি হল, বড়সাহেবের ডাকা মানেই কোথাও না কোথাও অনর্থ । লন থেকে অনেকটা দূরেই চলে এসেছিল বড়সাহেব ডাকছেন শুনেই দৌড় লাগাল, যদিও এই বয়সে দৌড়তে কষ্টই হয়, কেমন যেন হাঁপ ধরে। কিন্তু তা বললে চলবে! বড়সাহেব ডাকছেন যখন ছুটেই যেতে হবে।
বেতের টেবিলটা ঘিরে চারটে চেয়ার এসপি সাহেব জজসাহেব ছাড়াও আর এক জন বসে আছে। টেবিলের ওপর দুটো তাসের প্যাকেট। দৌড়ে এসে স্যালুট করে দাঁড়াল সুধাময়। “ব্রিজ খেলা জানো?” সুধাময় যেন আকাশ থেকে পড়েছে। বড়সাহেব তাকে ব্রিজ খেলার জন্যে ডাকছে। কি’ বলবে সে ভেবে পাচ্ছে না। পুলিশে ঢোকার আগে ছাত্রজীবনে সে যে ব্রিজ খেলেছে তাই নয় কমপিটিশনেও খেলে দু’একটা প্রাইজ আছে তার ঘরে।কিন্তু পুলিশের চাকরীতে ওসব বিলাসিতা চলে না। ব্যারাকে ফিস, রামির জুয়া খেলা হয়। সুধাময় ওসবের ধার দিয়েও যায় না। দুবার ঢোক গিলে কোনোক্রমে বলল, “ অনেকদিন আগে খেলেছি”। “তাতেই হবে, আমরা আর এক জন লোক পাচ্ছি না”। সুধাময়ের একবার গায়ে চিমটি কেটে দেখতে ইচ্ছে হল। স্বপ্ন দেখছে নাতো। ফাঁকা চেয়ারটাতে জজসাহেব বসতে বললেন, তার মানে সে জজ সাহেবের পার্টনার, একি কম ভাগ্যের কথা । বড় সাহেব তার বাঁদিকে। নীল আকাশ, সবুজ মাঠ, দূরে খেজুর গাছের সারি, শীতের সকালে মিঠে রোদ, এই রকম পরিবেশ বলেই না এসপি সাহেব এখানে আর এসপি সাহেব নন, জজসাহেবও জজসাহেব নন, সুধাময়ই একমাত্র পুলিশে চাকরী করা একজন সামান্য এ এস আই। ফলে কুন্ঠা তার যাচ্ছেইনা। খেলা শুরু হল বটে কিন্তু সুধাময় কিছুতেই খেলার সঙ্গে একাত্ম হতে পারছে না। ভেতরে ভেতরে হাত’পা কাঁপছে তার। ফলে দু’একটা ছোটখাট ভুল করে ফেলছে। যা হবার কথা নয় তার, সে জন্যে অবশ্য কেউ তাকে কিছু বলেনি। বারে বারেই মনে হচ্ছে এই আসরে সে একেবারে বেমানান, কথাটা তো মিথ্যে নয়।এর পর যা হল তা আর বলার কথা নয়। জজসাহেবের হরতনের সাহেবের ওপর বড়সাহেব ট্রাম্প্ করেছেন রুহিতনে দুরি দিয়ে, সুধাময় ছোট ইস্কাপন পাসিয়ে গেল। জজসাহেবের মুখে বিরক্তি খেলে গেল- “ কি হল তোমার হাতে রঙের বড় ছিল না”।
গলা শুকিয়ে গেছে সুধাময়ের। এতো ভুল নয় কি উত্তর দেবে সে, “ না মানে ছিল তো । “তাহলে ওভার ট্রাম্প না করে পাসালে কেন”? চুপ করে থাকে সুধাময়, জজসাহেব পুনরায় প্রশ্ন করেন “ কি হল চুপ করে আছো কেন নতুন খেলা শিখেছ?”
“ না স্যার, বড়সাহেবের দেওয়া তাসের ওপর ওভার ট্রাম্প করব? হতভম্ব জজসাহেব খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে “আই সি,”বলে হো হো করে হেসে উঠলেন । “এখানেও হায়ার্কি, না সীতাংশু, এরপর আর খেলা চলে না হি ইস মোস্ট মোস্ট অবিডিয়েন্ট সারভেন্ট ” । বলেই হাতের তাস ফেলে দিলেন উঠে দাঁড়ালেন । সুধাময়ের এতখানি আনুগত্য বড়সাহেবেরও বোধহয় ভাল লাগেনি, মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে । ধরা পড়ে যাওয়া অপরাধীর মত চুপ করে বসে ছিল। ঠিক সেই সময়ই বাংলো বাড়ীর ভেতর থেকে ডাক এল সাহেবদের। সকলেই উঠে পড়লেন, কেউ ফিরেও তাকালেন না তার দিকে । কিছুক্ষণ আগেও এতখানি গুরুত্ব পাওয়া সুধাময় মুহুর্তেই অপাংক্তেয় হয়ে গেল।
হাঁটতে হাঁটতে একটু দূরে চলে যায়, দু’একটা কুকুর ঘোরাঘুরি করছে বটে, লাঠি তুলে আর তাদের মারতে গেল না সুধাময়। আর কোন তাগিদ অনুভব করছে না সে, হাত’পাগুলো কেমন যেন ছাড়া ছাড়া হয়ে গেছে। যেখানে সাহেবদের গাড়ীগুলো দাঁড় করানো রয়েছে, তারই আড়ালে গিয়ে দাঁড়ায়। গাড়ির ড্রাইভাররা সামান্য দূরে ঘাসের ওপর বসে তাস খেলছে। বাংলোর ভেতর থেকে নারী পুরুষের সম্মিলিত হাসির শব্দ আসছিল। সুধাময় জানে এই ধরনের হাসি কোন পুরোদস্তুর জমে যাওয়া আসর থেকেই ভেসে আসে। সুধাময় কখনো সখনো মদ খেয়েছে বটে কিন্তু এইভাবে হাসতে পারেনি কখনো। গেটে যে দুজন কনেস্টেবলের ডিউটি দিয়েছিল, তারও ঘাসের ওপর বসে গল্প করছে। তাদের দিকে একবার তাকিয়ে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া মাত্রই চোখে পড়ল একটা গাড়ির দরজাটা হাটপাট করে খোলা। সুধাময়ের সারা শরীরে শিহরণ খেলে গেল। চারদিক তাকিয়ে দেখল কেউ তাকে দেখছে কিনা। সুধাময় ছাড়া প্রত্যেকেই কিছু না কিছুতে ব্যস্ত। পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল গাড়ির দিকে, খোলা দরজাটা হাতে করে টেনে বন্ধ করার ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে রইল কয়েক সেকেন্ড, চারদিকটা আবার ভালো করে দেখে নিল কেউ তাকে দেখছে কিনা, সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে গিয়ে বাঁপায়ের গোড়ালি দিয়ে এক ধাক্কা মারল, দড়াম করে গাড়ির দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল। অনেকদিনের জমে থাকা বাতাস বুক খালি করে বেরিয়ে এল সুধাময়ের । তাস খেলতে খেলতে গাড়ীর ড্রাইভার ঘাড় ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করল, “কি হল ছোটবাবু?” “কিছু না গাড়ীর দরজাটা বন্ধ করে দিলাম”। বাংলো বাড়ীর ভেতর থেকে আবার ভেসে এল সকলের হাসির উচ্ছ্বাস।