তখন সকাল।মোবাইল ফোনটার অবিবেচক রিংটোনে রোববারের আয়েশী ঘুমটা অসময়ে ভেঙ্গে গেল শেখরের।স্ক্রিনে অপরিচিত নাম্বার দেখে রিজেক্ট করে দেবে ভেবে ছিল একবার, পরক্ষণেই মত বদলে ফোনটা ধরে বিরক্তিসূচক গলায় “হ্যালো”বলার পরই অপর প্রান্তের কথায় চমকে ধড়মড় করে উঠে বসল।কলারের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে প্রশ্ন করল, “কে?” এর পর মাঝে মাঝে ‘হ্যাঁ’ ‘হু’অথবা ছোটখাট প্রত্যুওর দেওয়া ছাড়া পালটা কিছু জিজ্ঞাসা করার সুযোগই পাচ্ছিল না শেখর।তবে মুখের সেই বিরক্তিভাব চলে গিয়ে সামান্য কথাবার্তার মধ্যে ফুটে উঠছিল আন্তরিকতা।অসীম কৌতুহলে অনেকগুলো প্রশ্ন গলার কাছে জমা হয়ে থাকলেও জিজ্ঞাসা করার কোন সুযোগ পেল না শেখর।কারণ অপরপক্ষ তার প্রয়োজনীয়তা শেষ হওয়ার সাথে সাথে যোগাযোগ ছিন্ন করে দিয়েছিল।
ফোন ছাড়ার পর বেশ কিছুক্ষণ বিছানার ওপর চুপ করে বসে রইল সে।নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছিল না , এতক্ষণ ধরে যেটা শুনল।নেহাতই ঘুম ভেঙ্গে গেছে না হলে স্বপ্ন বলে ভুল করত। একবার দুবার অস্ফুটভাবে নামটা উচ্চারণ করল-“কাদম্বরী গুহ”।কিন্তু সে তো গুহ ছিল না,যতদূর মনে পড়ছে মিত্র।মাঝে অবশ্য বাইশ তেইশ বছরের ফারাক।এই সময়ের মধ্যে যে কোন মেয়ে মিত্র থেকে গুহ হতে পারে স্থায়ীভাবে।আশ্চর্য হবার কিছু নেই।
একেবারেই কি নেই ,বিদেশ থেকে ফিরে এতবছর পর শেখর খাসনবীশ সঙ্গে কোন দরকারেই বা দেখা করতে আসবে।শুধু তো এ প্রশ্ন নয়, অনেক কিছুই জানার ছিল।মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে রিং ব্যক করার ইচ্ছে যে শেখরের হয়নি তা নয়,কিন্তু পরক্ষণেই মনে হয়েছে অতিরিক্ত কৌতুহলের জন্যে কাদম্বরী যদি অন্য রকম কিছু মনে করে।তার দরকার যদি ফুরিয়ে যায়,তাহলে তো আর দেখা হবে না,সুতরাং প্রয়োজন বা কি আসবে যখন বলেছে, সামনে বসিয়ে সব কথা জানা যাবে।আজকের দিনটা সুন্দরী সাহচর্যে কাটবে মন্দ কি!এরকম কোনো আগাম বার্তা রাশিফলে দেওয়া আছে কিনা দেখতে হবে খবরের কাগজে।কাল্পনিক কথোপকথনের সংলাপ সাজাতে সাজাতে শেখর পরিস্কার বুঝতে পারলো মনের মধ্যে একটা অকারণ খুশি খুশি ভাব।কলেজে পড়াকালীন মুখোমুখি কথাবার্তা তো হয়নি কোন দিন।কত রকমেই না দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছে সেই সময়ে।কিন্তু দাম্ভিকতার ঘেরাটোপ এমন পর্যায়ে ছিল, সেটাতে চিঁড় ধরানো যায়নি কখনো।আজ এত বছর পরে এই অযাচিত সংবাদে খুশীভাব কি খুব অযৌক্তিক?
সেটার বহিঃপ্রকাশ ঘটল স্ত্রীকে ডাকার সময়-“শীলু, শীলু …কোথায় গেলে শুনে যাও তাড়াতাড়ি”।
সদ্য স্নান সেরে বেরিয়ে আসা শীলার উচ্ছ্বাসের কোনো কারণ নেই। সে জানে হাজারো কাজ এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়ে আছে,যতই ছুটির দিন হোক না কেন,বাড়ীর গৃহিনীর নিস্তার নেই,তাই স্বামীর সোহাগ পূর্ণ্ ডাক যে উদ্দেশ্য প্রনোদিত সেটা আন্দাজ করেই ঘরের বাইরে থেকে উত্তর দিল, “কি হলো ষাঁড়ের মতন চেঁচাচ্ছ কেন”?
“আরে শুনে যাও শিগগিরি”।চুল ঝাড়তে ঝাড়তে শীলা ঘরে ঢুকতেই শেখর বলল,-“শোন কাদম্বরী আসছে”।
কপালে ভাঁজ এনে শীলা প্রশ্ন করলো,-“কাদম্বরী! সে আবার কে”?
“আমাদের সঙ্গে কলেজে পড়ত,দীর্ঘদিন বিদেশে আছে,কিছুদিনের জন্যে কলকাতায় এসেছে।পুরানো বন্ধুদের সাথে একবার দেখা করতে চায়”।
“কই এই নামটা তোমার মুখে কখনো শুনেছি বলে মনে হয়না”।
“না সে ভাবে কখনো বলা হয়নি তোমাকে”।
“ তাহলে?শুধুই কি দেখা করতে চায়, নাকি পুরানো প্রেমটাও একবার ঝালিয়ে নেবার …”।
“ কি যে বলো”। শীলার কথা শেষ হবার আগেই শেখর কাদম্বরীর আনুপূর্বিক বর্ণনা দেওয়া শুরু করল,-“কত বড়লোক বাড়ীর মেয়ে জানো।কলেজে পড়া কালীন নিজেই গাড়ী ড্রাইভ করে আসত। প্রতিদিন নতুন নতুন শাড়ী,তখনকার দিনে কানে প্ল্যাটিনামের দুল, গলায় সোনার হারে হীরের লকেট,ভাবতে পারো একবার,সে করবে আমার সঙ্গে প্রেম!আমাকে যে মনে রেখেছে সেটাই আশ্চর্য”।
“তবে আর কি!আনন্দে উর্দ্ধবাহু হয়ে নাচতে শুরু করি।ছুটির দিন সাত সকালে যত ঝামেলা……।এর আগে কখনো এসেছে নাকি এ বাড়ীতে”।
“আরে না না। আমার সঙ্গে সে ভাবে কোনো পরিচয়ই ছিল না। দেখলেই বুঝতে পারবে। হলুদ আগুনের মতো গায়ের রং,গর্বে মাটিতে পা পড়ত না। মনে হত যেন হাওয়ায় ভাসছে। ছেলেদের কে গ্রাহ্যের মধ্যে আনত নাকি, যে আমাদের বাড়ীতে আসবে”।
“ তাহলে এখন আসবে কি করে”?
“ সেটা জানতেই তো ফোন করেছিল।বাড়ীর লোকেশনটা জানতে চাইছিল, যেটুকু বলার বলেছি,বুঝতে পারল কিনা জানি না, এরপর চিনতে না পারলে নিশ্চয়ই ফোন করবে ”।
“কেন আসছে জিজ্ঞাসা করোনি”?ঘটনাটা শীলার কাছে এখনো বোধগম্য হচ্ছেনা।
“সেটা জিজ্ঞসা করা অভদ্রতা হত, যেখানে সে নিজে যেচে আসতে চাইছে”।
“এই তো বলছ সে রকম কোনো পরিচয় ছিল না ,ছেলেদের পাত্তাই দিত না।যখন এখানে আসার কথা বলল, তখনই তো জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল, আজ এত বছর পরে হঠাৎ তার এই মতিচ্ছন্ন হল কেন”?
“ইয়ারকি করো না তো।শোন এত দিন পর যখন আসছে,বিশেষতঃ দুপুর বেলা তখন খাওয়া দাওয়ার একটা ব্যবস্থা করতে হয় তো”।
“হ্যাঁ।তা তো করতেই হয়, বিনা মাইনের ঝি কাম রান্নার মাসি যখন আছে । পঞ্চব্যঞ্জন রান্নার ভাবনা কি”।
“তুমি এভাবে বলছ কেন”?
তবে কিভাবে বলব?আমার তো কোনো ব্যর্থ প্রেম নেই”।
“ না তোমাকে বোঝাতে যাওয়াই অনর্থক।শোনো আমি বাজারে গেলাম। বেশী দেরী করে লাভ নেই”।
শীলাও কোনো কথার উত্তর না দিয়ে বাইরের রোদে গামছা মেলতে গেল।সেই সময় সে লক্ষ্য করল,শেখর লুঙ্গির ওপর পাঞ্জাবী চড়াচ্ছে। যা সে কোনদিন করে না।মনে মনে না হেসে পারলো না।
মুখে যাই বলুক না কেন,শীলা জানে একজন যখন আসবে ঘর কন্না সাজিয়ে রাখা তারই দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।তাই সব কাজ ছেড়ে দিয়ে এসি লাগানো বসার ঘরটার দিকে নজর দিল।দেয়ালের কোণে সামান্য ঝুল,আসবাবপত্রের ওপর অগোছালো জিনিষপত্র,বন্ধ হয়ে যাওয়া দেয়ালঘড়ি,সেন্টার টেবিলে নোংরা টেবিল ক্লথ, আরো কতকগুলি অপরিচ্ছন্নতা ঘরময় ছড়িয়ে ছিল।সেগুলো তার নজর এড়ালো না।কাজের মেয়েটা কখন আসবে তার ঠিক নেই,তার কাছ থেকে সাহায্যের প্রত্যাশায় না থেকে নিজেই হাত লাগালো।বেশ সময়ই লাগলো সব কিছু শেষ করতে।এবার কার্পেট পেতে, সেন্টার টেবিলে দামী ফুলদানীতে সুদৃশ্য নকল ফুল রেখে ঘরটার চারদিকে তাকিয়ে দেখছিল কোনো কিছু বাদ পড়ল কিনা।পাশের ঘর থেকে রুম ফ্রেসনার এনে সারা ঘরে যখন স্প্রে করছে, সেই সময় ঝড়ের মতন শেখর ঢুকলো। ঘরের চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে শীলার উদ্দেশ্যে প্রশংসাসূচক বাক্যছুড়ে দিল-“বাঃ! অপূর্ব!”
শুধু এইটুকুতেই ক্ষান্ত রইল না।দু পা এগিয়ে নিয়ে শীলার গাল টিপে আদর করে নিজের উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারলো না।
“এই না হলে আমার বৌ’।হা হা করে যাত্রার ঢঙে হেসে শীলা কে জড়িয়ে ধরতে গেল।শীলা সরে গিয়ে চলে যেতে উদ্যত হলে শেখর হাত ধরে একটা চেয়ারে বসাতে গেল।
“দাঁড়াও এসিটা চালিয়ে দি, ঘরটা ঠান্ডা হবে”।
শেখরের আনন্দের আতিশয্যের গুরুত্ব না দিয়ে রুম ফ্রেসনারের কৌটো হাতে নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল।
“কি হলো, যাচ্ছ কোথা ? একটু বসো, এসিটা চালালাম ……না”।
“তোমার সঙ্গে আদিখ্যেতা করলে চলবে?বাড়ীতে যখন একজন আসার কথা”।
“ওঃ!হ্যাঁ হ্যাঁ, চলো চলো, কি কি রান্না হবে একটু বুঝিয়ে দি”।
বাজারের বহর দেখে শীলা মুখ টিপে হাসল। আড়চোখে শেখরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল, “ কত খসল?”
“সে আর জেনে কি করবে,জিনিষপত্র দেখে অনুমান করে নাও”।
ব্যগ থেকে আনাজপাতি বার করতে করতে শীলা বলল-“একেই বলে পুরানো প্রেম”।
এবার শেখর একটু বিরক্ত হলো।“আঃ! কত বার বলবো। কে বলেছে কে পু্রোনো প্রেম? মাঝে মাঝে একটু পিছনে লাগতাম।ব্যস ওই পর্যন্ত”।
“ব্বাবা!তার জন্যেই এত কিছু”।
শেখর একথার কোনো উত্তর না দিয়ে রান্নাঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর শীলা লক্ষ্য করলো দুদিনের না কামানো কাঁচা পাকা দাড়ি কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছে শেখর।
শীলা হাসতে হাসতে টিপ্পুনী কাটলো-“ মাথার পিছনের চুলগুলো তো সাদা হয়ে গেছে গো”।
(২)
ঠিক দুপুর বেলা ।তখনই কলিং বেলটা সশব্দে বেজে উঠল।শেখর বোধহয় এই শব্দটার জন্যেই অপেক্ষা করছিল।দ্রুত পায়ে প্রায় ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দেখল জটাধর সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।জিজ্ঞাসু চোখে তাকাতেই জটাধর বলল,-“শেখরদা আপনাদের গলির বাইরে মাঠে একটা বিএমডাবলু দাঁড়িয়ে, এক মহিলা গাড়ীর কাঁচ নামিয়ে ‘নিশ্চিন্ত নীড়”বাড়ীটা কোথায় জিজ্ঞাসা করছে”।
উত্তেজনায় শেখর বুকের মধ্যে হৃদপিণ্ডের ধড়ফড়ানি টের পাচ্ছে।হাত পায়ে তার প্রভাব সর্বাত্মক। লুঙ্গি ছেড়ে সাদা পাজামা পাঞ্জাবীতে দেহ ঢেকেছিল আগেই।জটাধর হয়ত আরো কিছু বলত।। সে অপেক্ষায় না থেকে কোনোরকমে চটি গলিয়ে দ্রুত পায়ে গলিটা অতিক্রম করে চোখ ধাঁধানো গাড়ী দরজার হ্যান্ডেল ধরতেই ভেতর থেকে সেটা খুলে গেল। কালো রোদ চশমায় চোখ ঢেকে এক মহিলা বিদেশী পারফিউমের গন্ধ ছড়িয়ে গাড়ী থেকে নেমে এল। পরনে সাদা জমির ওপর হলুদ মেরুনের কাজ করা ঢাকাই সিল্ক।গলায় একটা ঝুঁটো মুক্তোর মালা, তার সঙ্গেই সাদৃশ্য রেখে একই মুক্তোর ছোট্ট কানের দুল।আর কোন অলংকারের বাহুল্য নেই।ঠোঁটে কালচে লাল রং জ্বলজ্বল করছে। শেখরের মনে হল এ নিশ্চয়ই বিদেশী লিপষ্টিকের ঔজ্জ্বল্য, এত বছর পর কাদম্বরী্র পরির্বতন সর্বাংগে।মনের মধ্যে থেকে যাওয়া ছবিটার সঙ্গে মেলাতে একটু অসুবিধা হচ্ছিল বৈকি শেখরের।আগের চেয়ে বেশ কিছুটা পৃথুলা, কোমরে ত্রিবলী রেখা স্পষ্ট।মুখে বয়স জনিত ছাপ গাম্ভীর্যে পরিনত। গায়ের রঙে সেই সোনালী আভা চলে গিয়ে সাদাটে ভাব যেন রাংতায় মোড়া। এই কি কাদম্বরী…!
রোদ চশমা খুলে এক লহমায় শেখরকে জরিপ করে নিল।–“ আমি কাদম্বরী গুহ, সকালে ফোন করেছিলাম, শেখর নিশ্চয়ই ?”
“হ্যাঁ।হ্যাঁ। এসো এই গলির ভেতরেই আমার বাড়ী”।
“গাড়ীটা কি এখানেই থাকবে?’
“ড্রাইভারকে ওই ছায়ায় রেখে দিতে বলো. কোনো অসুবিধে নেই”।
“তোমার সেই সময়কার চেহারা আমার কিন্তু একদমই মনে নেই, শুধু শেখর নামটা মনে ছিল,”।
“স্বাভাবিক, প্রথমতঃ এত বছর পর, তাছাড়া সেভাবে পরিচয় বা ঘনিষ্ঠতা হয়নি কোনদিন”।শেখরের কথার মধ্যে সামান্য হলেও কিছুটা অনুযোগ ফুটে উঠল।
শেখরকে অনুসরণ করে কাদম্বরী চলে যাওয়ার দিকে কিছু জমায়েত হওয়া কৌতুহলী মানুষজনের উৎসুক চোখ লক্ষ্য করতে লাগল ওদের যতক্ষণ না তারা চোখের আড়ালে চলে যায়।
ঘরটায় আগে থেকেই এসি চলছিল,কাঁচের দরজা ঠেলে কাদম্বরীকে নিয়ে ঘরে ঢোকা মাত্রই কাদম্বরী আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করল-“একি! এসি চালিয়ে রেখেছ কেন?”
“বাঃ!বিলেতে থাকো তুমি, জুলাই মাসে বৃষ্টি না হলে এখানে খুবই গরম, সেটা ভুলে যাওনি নিশ্চয়ই।সেইজন্যেই আর কি”।
“ না ভুলি নি,তুমি বরং এসিটা বন্ধ করে পাখা চালিয়ে দাও,অনেক কমফর্টেবেল ফিল করব”। শেখর যেন একটু আশাহত হল।কাদম্বরী ভালভাবে লক্ষ্য করছিল ঘরের চারদিক।
“ বাড়ী ঘর দোর তো বেশ ভালই বানিয়েছ দেখছি”।
“বাবা একতলাটা করে গিয়েছিলেন,ওপরটা আমি করেছি, নীচেটা একটু আধটু রিনোভেড করে”।
“তোমার স্ত্রী কোথায়? ছেলে মেয়েদেরও দেখছি না”।
“ ওকে ডাকছি। শীলা,- একবার এঘরে এসো,ছেলে নেই, দুটো মেয়ে”।শেখর হাসলো কথাটা বলে।
“বেশ তো ডাকো ওদের পরিচয় করি”।
“দুজনেই গেছে গানের স্কুলে এসে যাবে একটু পরে”।
সেই সময় কাঁচের দরজা ঠেলে শীলা ঢুকলো।দুহাত জোড় করে নমস্কার জানিয়ে নিজেই বলতে শুরু করলো-“আপনার কথা এর আগেও কখনো শুনিনি। আজ সকালেই ও জানালো”।
“বলবেই বা কি করে। বলার মতো সম্পর্ক তো কোনদিন ছিল না ভাই, তুমি বলছি কিছু মনে করো না, বয়সে তুমি অনেকটাই ছোট হবে”।
“না ,না মনে করবো কেন, ঠিকই তো”।
“এর পরের কথা গুলো শুনলে নিশ্চয়ই মনে মনে অন্য রকম ধারণা করবে। তোমার স্বামী কিন্তু মানুষ হিসাবে মোটেই সুবিধের ছিল না কোনদিন”।
ভাবতেই পারেনি শীলা, আলাপের শুরুতেই এই জাতীয় অভিযোগ স্বামীর বান্ধবীর কাছ থকে শুনতে হবে। বিমূঢ় দৃষ্টিতে কাদম্বরীর মুখের দিকে তাকিয়ে হতবাক হয়ে রইল সে।
“ না না এত তোমার লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। কলেজে শেখর আমার নাম নিয়ে কবিতা লিখত ব্ল্যাকবোর্ডে। এখন তো কবি হিসাবে বেশ নাম হয়েছে শুনতে পাই। দু একটা পুরস্কার পাওয়ার দৌলতে সাহিত্যজগতে সবাই একডাকে চেনে।অথচ তখন কবিতাগুলো কে লিখেছে জিজ্ঞাসা করলে বলতো বাণভট্ট”-কথাগুলো বলেই কাদম্বরী হেসে উঠল।
সঙ্গে সঙ্গে শেখরের মনে পড়ল প্রফেসার জিজ্ঞাসায় কথাটা এমনভাবে চাপা গলায় বলেছিল সে যাতে কেউ ধরতে না পারে, এরপর ক্লাস সুদ্ধু সকলের হাসির জন্যে প্রফেসার কথা না বাড়িয়ে সেদিনের লেকচারে চলে গিয়েছিলেন। ঠিক তখনই শেখর লক্ষ্য করেছিল কাদম্বরীর গালের হলুদ রং কিভাবে লাল হয়ে উঠেছিল। এত বছর পর কথাটা তোলায় শেখর পরিস্কার বুঝতে পারলো সেদিনের রক্তবর্ণ লজ্জায় নয়, রাগে,আজও তার কিছুটা অবশিষ্ট রয়ে গেছে।
নিজের স্বামীর সম্পর্কে এই সমস্ত শুনতে ভাল লাগার কথা নয় শীলার।তবু যথা সম্ভব বিষযটাকে হাল্কা করে শেখরের সপক্ষেই সওয়াল করতে চাইল সে।
“ আর বলবেন না আমরা যখন কলেজে পড়তাম কিছু ছেলে নানাভাবে পিছনে লাগত। এখন ওগুলো নেহাতই ছেলেমানুষী মনে হয়”।
শেখর অনেক্ষণ চুপ করে বসে ছিল।শেষে বাধ্য হয়েই বলল-“কাদম্বরী তুমি কি এইসব কথা শোনাবার জন্যে আজ এখানে এসেছ? বেশ সেই সময় যাই ঘটে থাকুক না কেন, তার জন্যে আমি দুঃখিত, মাপ চাইছি। শীলা তুমি আর দাঁড়িয়ে থেকে না,কাদম্বরীর জন্যে একটু সরবত টরবত নিয়ে এসো”।
“ না, না, তুমি যেও না ভাই বসো।শোন শেখর কলেজের ওই ঘটনার জন্যে তোমাকে মাপ চাইতে হবে না,ও জানে না তাই মজা করার জন্যে ঘটনাটা বললাম। আমি এসেছি অন্য কারণে”।
“তুমি আমার ফোন নাম্বার পেলে কোথায়?”
“তুমি তো অপরিচিত নও শেখর, কত মানুষের সঙ্গে তোমার যোগাযোগ। তোমার ফোন নাম্বার পাওয়া তো এমন কিছু কঠিন নয়”।
“ঠিক আছে কাদম্বরী ,অনেকক্ষণ বাড়ী থেকে বেরিয়েছ নিশ্চয়ই। এই ঘরেরই এ্যাটাচড্ ওয়াসরুমে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে নাও। শীলা তুমি চা জলখাবার রেডি করো”।
“না ,না, শেখর আমি কিছু খাব না”।এবার শীলা কে লক্ষ্য করেই কাদম্বরী বলল,
“তুমি ভাই ওই চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসো,যে কথা গুলো বলতে এসেছি সেগুলো তোমারো শোনা দরকার”।
“থাক না দিদি, এতদিন পর এসেছেন একটু অন্য কথা হোক, মাপ যখন ও চেয়েইছে”।”
তুমি ভুল করছ ভাই, কলেজে ওই ঘটনার জন্যে আমার কোনো রাগ,অভিমান,ক্ষোভ কিচ্ছু নেই, এতদিন পরে এসেছি সম্পূর্ণ একটা অন্য কারণে। একটা জিনিষ ফেরত নিতে এসেছি”।
“কি সেটা?”শেখরই প্রশ্নটা করল।
“একটা ডাইরী”।
“আপনার ডাইরী ওর কাছে আছে এখনো?”শীলার প্রশ্নের উত্তরে কাদম্বরী ঘাড় নাড়ল,
“ না আমার নয়,আমার বাবার”। শেখর উত্তেজিত হয়ে উঠল, চেয়ারটা সামান্য টেনে নিয়ে প্রতিবাদের সুরে বলল, “ কি বলছ, কি তুমি?”
“ঠিকই বলছি শেখর, একদম নিশ্চিত না হয়েই কি বলছি”।
“ কোথাও ভুল হচ্ছে না তো দিদি?”
“না ,না , ভুল হবে কেন, আমি সব জেনে শুনেই এতবছর পর এসেছি”।
শেখরের অবাক হওয়া যেন আরো বাকী আছে বলে মনে হয়। এবার সে সরাসরি জানতে চায়,-“তোমার বাবার ডায়রী আমার কাছে থাকবে কি করে? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না কাদম্বরী”।
“বুঝতে তুমি ঠিকই পারছ, কারণ তুমি জহুরী।বরং আমিই ঠিক বুঝতে পারিনি সেই সময়”।কাদম্বরীর গলায় অবিশ্বাস্য আত্মপ্রত্যয়।
“দেখো আমার বাড়ীতে এসে তুমি কিন্তু এভাবে অপমান করতে পারো না আমাকে”।সারা সকাল কাদম্বরীকে নিয়ে যে সমস্ত সম্ভাব্য সংলাপ মনে মনে ঠিক করে রেখেছিল,তা এলোমেলো হয়ে যাওয়ায় শেখর সত্যিই বিচলিত।
“আমি তো অপমান করিনি তোমাকে”। কাদম্বরীর গলায় সেই একই সুর।
“বাঃ! সম্পূর্ণ একটা মিথ্যে অভিযোগ এনে বদনাম দিতে চাইছ, এটা অপমান নয়”।
“ আমার কোনো কথাটাই মিথ্যে নয় শেখর। সত্যিটা তোমার স্ত্রীরও জানা দরকার। তাই ওকে বসিয়ে রেখেছি। শোন ভাই ক্লাস নাইনে পড়া কালীন আমার বাবা মারা যান।উনি নিয়মিত ডাইরী লিখতেন।তবে কোনো ঘটনার উল্লেখ তাতে ছিল না,এক অদ্ভুত গদ্যে প্রতিদিনের নিজের মনের ভাব লিখে রাখতেন।বাবা মারা যাবার পর ওটাই আমার সম্বল হয়ে ওঠে।মাঝে মাঝেই উলটে পাল্টে দেখতাম, আর লেখা গুলো বারবার পড়তাম, চোখে জল চলে আসত, একদিন কলেজে ওই ডাইরীটা হারিয়ে গেল”।
শেখরের সহ্যের সীমা বোধহয় আর থাকছে না,——–
“ কি বলতে চাইছ কি তুমি, ডাইরীটা আমি চুরি করেছিলাম”।
“তোমার পুরস্কারপ্রাপ্ত ‘নিষ্পাদপ অরণ্যের রোজনামচা” বইটা কিন্তু আমার কাছে আছে।এটা হাতে না এলে কোনো দিনই জানতে পারতাম না যে ডাইরীটা তোমার জিম্বায়”।
“ওই বইটার মাধ্যমে তুমি কি প্রমাণ করতে চাইছ?”
“আমি কিছুই প্রমাণ করতে চাইছি না শেখর,শুধু ডাইরীটা ফেরত চাইছি”।
“তুমি ভুল করছ কাদম্বরী,এরকম কোনো ডাইরী আমার কাছে নেই।তাছাড়া যে বইটার কথা উল্লেখ করলে তার কবিতাগুলো আমারই লেখা বিভিন্ন সময়ে,বিদগ্ধ সমাজ সেটা জানে,কারণ কবিতা উৎসবে, নানান কবিতা পাঠের আসরে ওই কবিতা গুলো আমি পড়েছি,অনেক পত্র পত্রিকায় সেগুলো ছাপা হয়েছে,ওই বইটার সাহায্যে তুমি কিছুই প্রমাণ করতে পারবেনা কাদম্বরী”।
“ আমি কিন্তু একবারও বলিনি, ওই কবিতাগুলো তোমার লেখা নয়। বাবার গদ্যের লাইন গুলো নানান ভাগে ভাগ করে, মাঝে মাঝে নিজের কথা ঢুকিয়ে, যথার্থ পাংচুয়েশনে কবিতা বানালে সেগুলো তোমারই লেখা হয়, কারণ তুমি কবিতা লিখতে জানো”।
“এনাফ ইজ এনাফ কাদম্বরী, কবি হিসাবে আমার একটা খ্যাতি আছে সাহিত্য জগতে,সেটা নষ্ট করার কোনো অধিকার তোমার নেই, প্রয়োজনে তুমি কোর্টে যেতে পারো”।চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল শেখর।
শেখরের উত্তেজনা কিন্তু কাদম্বরীকে স্পর্শ করল না,আগের মত স্থির গলাতেই বলল,-
“বসো,শেখর বসো, অত উত্তেজিত হয়ো না,কোর্টে গিয়ে তোমাকে ছোট করার ইচ্ছে আমার এতটুকু নেই, আমি শুধু বাবার স্মৃতিটুকু ফেরত পেতে চাইছি”।
“যা আমার কাছে নেই তা তোমাকে আমি কোনোদিনই দিতে পারবো না,একটা মিথ্যে অভিযোগের মান্যতা দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়,তুমি এখন আসতে পারো”।লম্বা লম্বা পা ফেলে শেখর ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
“আপনি কি একটু বসবেন দিদি?”শীলা নিজের জায়গা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।
“ডাইরী না পাওয়া অবধি বসব বৈকি, শেখর যতই রাগ করুক, ও্টা না নিয়ে আমি যেতে পারবো না।
“ঠিক আছে , আপনি বসুন, ওর লেখার ঘরে অনেক পুরানো ডাইরী সাজানো আছে, হয়ত পান্ডুলিপি হিসাবে রেখে দিয়েছে,সেগুলো সব আমি নিয়ে আসছি, আপনি দেখুন,সত্যি মিথ্যের একটা হেস্ত নেস্ত হওয়া আমিও চাই।আপনি একটু অপেক্ষা করুন,আমি আসছি”।
শীলা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে কাঁচের দরজার দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল কাদম্বরী।সদ্য ব্যাটারী পালটানো ঘড়িতে টিক্ টিক্ আওয়াজ ছাড়া এক আশ্চর্য নৈঃশব্দের মধ্যে কাদম্বরীর দৃঢ় প্রতিজ্ঞ অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হল না। ঘড়ির কাঁটা প্রতিটি শব্দের সাথে স্থান পরিবর্তন করলেও কাদম্বরী কিন্তু স্থির অচঞ্চল,এক দৃষ্টে দরজার দিকে তাকিয়ে বসে আছে শীলার ডাইরী নিয়ে ফিরে আসার অপেক্ষায়।অনেকটা সময় পার করে শীলা ফিরে এল দুহাতে দুটো বিগ সপার হাতে।শেখরের ওপরের লেখার ঘর থেকে যাবতীয় ডায়রী বোঝাই করে নিয়ে এসেছে।
“দেখুন তো দিদি এর মধ্যে আপনার বাবার হারিয়ে যাওয়া ডাইরী আছে কিনা”।
“তুমি একে একে বার করে রাখো । ওটা দেখলেই ঠিক চিনতে পারব”।
“তার চেয়ে এক কাজ করলে হয় না , আপনি ওই ব্যগটা থেকে আর আমি এই ব্যগ থেকে ডায়রী বার করতে থাকি,অনেকটাই তাড়াতাড়ি হবে”।
“বেশ”।
রং মেলান্তি খেলোয়াড়ের মতন শীলা আর কাদম্বরী তাসের বদলে একটার পর একটা ডাইরী রেখেই চলেছে, শীলার মনের মধ্যে একটা অদ্ভুত অনুরণন ,-“হরতন, ইস্কাপন,চিড়িতন, রুহিতন,আবার ইস্কাপন হরতন, স্তূপীকৃত হয়ে উঠছে পুরানো ডাইরীর পাহাড় টেবিলের ওপর।শীলা জানে যে কোন সময় তাসের পিঠ উঠিয়ে নেবার মতন আত্মবিশ্বাসী কাদম্বরী পেয়ে যাবে তার সেই উদ্দিষ্ট বস্তু, শুধু সময়ের অপেক্ষা।হেরে যাওয়া খেলোয়াড়ের মনোভাব নিয়েই যন্ত্রবৎ কাজটা করে চলেছে সে, আর মাত্র কয়েকটা। তবে কি নেই, শেষ মুহুর্তে জিতে যাবে শীলা।বিফল মনোরথ কাদম্বরী ফিরে যাবে, ঠিক তখনই-“হরতন হরতন!যাঃ!
“থাক, থাক, এটাই মনে হচ্ছে,দেখি,দেখি, হ্যাঁ! এই তো বাবার নাম লেখা ভুজঙ্গ শেখর মিত্র।
শীলা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা নিচু করল। কাদম্বরী মুখে বিজয়নীর হাসি নিয়ে ডাইরীটা বুকে চেপে ধরলো।
“ওঃ!মনে হচ্ছে অনেকদিন পরে বাবার ছোঁয়া পাচ্ছি।তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে পারব না।তুমি যে আমার কি উপকার করলে”।শীলার দুটো হাত নিয়ে নিজের বুকের কাছে চেপে ধরলো কাদম্বরী।
“আর দেরী করব না ভাই এবার আমি উঠব”।
“সেকি! এতদিন পরে এলেন ,ভরদুপুরে মুখে কিছু না দিয়ে চলে যাবেন,গৃহস্থের অকল্যাণ হবে যে”।
“ আমি তো নেমন্তন্ন খেতে আসিনি, ডায়রী ফেরত নিতে এসেছিলাম, সেটা পেয়ে গেছি তোমারই জন্যে।এবার চলে যাব।। অকল্যাণের কথাই যখন বললে তখন এক গ্লাস জল নিয়ে এসো”।
“শুধু জল কি অতিথিকে দিতে আছে”।
শীলার কথা শুনে কাদম্বরী মৃদু হাসলো-“ বেশ। শেখরকে ডাকো একবার।আর তো দেখা হবে না কখনো। ওকে শুধু এইটুকু জানাবো,ওর জন্যেই আমার বাবা বেঁচে রইলেন,ওর বইএর মধ্যে।ওকে ছোট করার কোন উদ্দেশ্য আমার নেই”।
(৩)
এখন বিকেল।ওপর থেকে নেমে কাঁচের দরজা সরিয়ে নরম শোফার ওপর শরীরটাকে ছেড়ে দিল শেখর। গল্প লেখার অভ্যাস তার একেবারেই নেই। কিন্তু কি করবে-“শুক-সারী”পত্রিকার সম্পাদকের অনুরোধ,-এ মাসের প্রচ্ছদ কবির কলমে গল্প। সেখানে শেখর খাসনবিশের গল্প না থাকলেই নয়।বিষয়বস্তু সবটাই কল্পনা।শুধুমাত্র ডায়রীর প্রসঙ্গটুকু বাদ দিয়ে।ওটা শেখর পেয়েছিল কলেজ মাঠে বাঁধানো গাছ তলায়।ডায়রীতে কাদম্বরীর নাম না থাকলেও শেখর জানত ওটা ওর। প্রায়শঃই কাদম্বরীকে একমনে ডায়রীর পাতা ওল্টাতে দেখে কৌতুহলও তৈরী হয়েছিল।ডায়রীতে কাদম্বরীর বাবার নাম দেখে একবার ভেবেছিল ফেরত দিয়ে ঘনিষ্ট হবে। পরক্ষণেই মনে হয়েছিল বিপরীত প্রতিক্রিয়াও হতে পারে কাদম্বরীর তরফ থেকে। অবশ্য ওটা ফেরত দিলে এরকম একটা কাব্যগ্রন্থ লেখা হত না। কাদম্বরীর অভিযোগ গুলো সবই শেখরের মনগড়া,এটা তো সত্যি কবিতাগুলো রচনার থেকে নির্মান কৌশলই বেশী, সেটা শেখর ছাড়া আর কেই বা জানবে।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে সেন্টার টেবিলের দিকে নজর পড়তেই চমকে উঠল শেখর। একটা প্লেট আর কাঁচের গ্লাস কে রাখল এখানে! চমক বোধহয় আরো বাকী ছিল।গ্লাসের কাঁচে একটা দাগ দেখে তুলে নিয়ে নিজের মুখের সামনে নিয়ে এল ভাল করে দেখার জন্যে।হ্যাঁ। ঠিক তাই, গ্লাসের গায়ে লেগে আছে কালচে লাল কাদম্বরীর লিপস্টিকের রং।
আরএক মুহুর্ত দেরী করল না শেখর। দুরদাড় করে দোতলায় ছুটল ওর লেখার ঘরে । ভুজঙ্গ শেখরের ডায়রীটা আছে কিনা দেখার জন্যে।