দেখা হত জুন মাসের গরমে মাথা ঢাকা টিনের শেডের ধাতব আস্তরণের ছায়ার তলায় অপেক্ষা রত বাসযাত্রীদের মাঝখানে।পৌনে দশটা থেকে দশটা।কাঁধে কালো ব্যাগ,চোখে কালো রোদ চশমা, সঙ্গে থাকত তাঁতের সস্তা শাড়ী পরা শ্যামলা একটি মেয়ে, বড়ই বেমানান তোমার পাশে।আমার উপস্থিতি উপেক্ষা করতেই যেদিক থেকে বাস আসবে তার উলটো দিকে চেয়ে অপেক্ষা করতে তুমি। তা হোক অল্প হাওয়ায় দোল খাওয়া মন কোষাকোষি ঢাল উপুড় করে পালন করে রোজকার ব্রত, পৌনে দশটা থেকে দশটা বাজার অপেক্ষায়।
একদিন শূন্য বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষার রশি প্রায় ছেঁড়ার উপক্রম। হাতে মিলল এক টুকরো কাগজ অপরিচিতের মাধ্যমে।“আজ কলেজের শেষ দিন”।–অনিন্দিতা।বুঝলাম এক ধরণের নিষেধবাণী।উদযাপনের আগেই ব্রত ভঙ্গ হল।
এবার পর্ব উন্মোচন অনেক বছর পর।শীতের এক রৌদ্রকরোজ্জ্বল সকালে।রিকশার ওপর রোদ চশমার মধ্যে দিয়ে তাকিয়েছিলে। পৃথুলা হয়েছ কিছুটা,পুনরায় ব্রত শুরুর অঙ্গীকার নেই বলেই জিজ্ঞাসা করলাম-“ নমস্কার চিনতে পারছেন”?
প্রতি নমস্কারের সাথে,-“না তো।
“আপনি অনিন্দিতা না”?
“না শ্যামলিমা,চিনব কিকরে আমি তো দেখতে পাইনা কাউকে জন্মাবধি”।
“সরি ভুল করেছি তাহলে”।
“না ভুল করেন নি আপনি তো সুপ্রিয়, ডাক্তারী পড়তেন এক সময়ে”।
“হ্যাঁ। কিন্তু এসব আলাপ তো হয়নি কখনো”।
“অনিন্দিতা বলত, কতবার দেখা হয়েছে আপনার সাথে বকুলতলা বাসস্ট্যান্ডে।কথা বলেলনি অবশ্য।দেখুন না বাঁচাতে পারেন কিনা গরিব মেয়েটাকে।হার্টের অসুখে ভুগছে অনেকদিন”।
“কিন্তু আমি তো চোখের ডাক্তার,দরকার হলে আপনাকে”।
“দরকার হবে না”।– রিকশা নড়ে উঠতেই “চলি তাহলে”।
“চলি নয় আসি”।–ততক্ষনে শ্যামলিমা শ্রবণসীমার বাইরে।