অখিল নন্দন চত্বরে পোট্রেট এঁকে ভালই রোজগার করে। আঁকার হাত বেশ ভাল, পেন্সিলের কয়েকটা আঁচড়েই সামনে বসা ছেলে বা মেয়ের মুখের ছবি স্পষ্ট হয়ে ওঠে সাদা কাগজে। অখিলের ভাই নিখিল ইদানীং পার্টি করছে, সমানে ভোট, নিখিলের মত ছেলেদের খুব দরকার রাজনৈতিক দলের। টালির ঘরে দু’ভাই একসঙ্গেই থাকে। কথা বার্তা কমই হয় দুজনের, ঘরের দু’পাশে দুটো চৌকিতে দুজনে রাতে শোয়। দিন চার পাঁচ আগে সন্ধ্যের পর নিখিল একটা মেয়েকে নিয়ে ঘরে এলো।
“বিয়ে করেছি, আমার বউ, দাদাকে পেন্নাম করো”।
“বেশ করেছিস কিন্তু এখানে থাকবি কিকরে”?
“অসুবিধে হবেনা ”। বলেই তার টাঙিয়ে পুরানো ছেঁড়া চাদর কাপড় লাগিয়ে নিজের চৌকিটা ঘিরে ফেলল। তবুও প্রতি রাতে ছেঁড়া চাদর কাপড়ের ফাঁক ফোকর দিয়ে ওদের দাম্পত্য অখিল ভালভাবেই টের পেত, তারপর আর ঘুম আসতে চাইত না। এই অসুবিধের কথা নিখিলকে কিন্তু জানায়নি।
সেদিন সন্ধ্যের পর যখন বাড়ি ফিরছিল, পাড়ায় ঢুকেই বুঝতে পারল কোথাও একটা গন্ডগোল হয়েছে। ছোট ছোট জটলা চলছিল এখানে ওখানে, নিখিল নাকি দলবল নিয়ে বিপক্ষ দলের নির্বাচনী সভা বোম মেরে ভেঙ্গে দিয়েছে, প্রাক্তন এমএলএ আহত হয়েছেন। নিখিলকে পুলিশ খুঁজছে। ঘরে ঢুকে অবাক হয়ে গেল, নিখিল তার বৌকে নিয়ে সিঙ্গাড়া জিলাপি খাচ্ছে।
“কিরে কি শুনছি এসব”। নিখিল উঠে এসে একটা সিঙ্গাড়া আর জিলাপি হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, “ শিবেনদা বলেছে সব ম্যানেজ করে দেবে”।
সেদিন অখিল ঘুমিয়েই পড়েছিল, বাইরে দরজায় ধাক্কার শব্দে ঘুম ভাঙ্গল। আলো জ্বালাতেই দেখল নিখিল আড়ায় উঠে টালি খুলছে।ইসারায় অখিলকে দরজা খুলতে সামান্য দেরী করতে বলল। অখিল বুঝতে পারল শিবেনদার ভরসার ব্যাপ্তি খুব একটা চওড়া নয়। দরজা খুলতেই হুড়মুড় করে একদল পুলিশ ঢুকে পড়ল । কাপড়ের ঘেরাটোপের আড়ালে জবুথবু হয়ে চৌকিতে বসেছিল নিখিলের বৌ। নিখিলের কথা জিজ্ঞাসা করতেই ওর বৌ আঙ্গুল তুলে খোলা টালির ফাঁক দিয়ে অন্ধকার আকাশ দেখিয়ে দিল। পুলিশের টর্চের আলো সেদিকে ব্যর্থই সন্ধান করল নিখিলের।
পুলিশের দল চলে গেলে অখিল ওদের সঙ্গে বাইরে এসে দাঁড়াল খানিকক্ষণ। ঘরে ঢুকেই অখিল দেখল কাপড়ের ঘেরাটোপ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল, “কি ব্যাপার?”
“আমার একটা ছবি এঁকে দেবেন”। এই প্রথম নিখিলের বৌকে সে ভালো করে দেখল,পানপাতার মতন তেকোণা মুখের পাতলা ঠোঁটে আলগা হাসি, মাজারঙে এরই মধ্যে হাল্কা পাউডার বুলিয়ে পরিপাটি করে চুলটিও আঁচড়িয়ে নিয়েছে , কপালে ছোট্ট একটা লাল টিপ। মাথায় অল্প ঘোমটা দেওয়া।
“দিনের আলো ফুটুক আগে ”।
“না। এখনই”।
“ তাহলে ……..…… মাথার ঘোমটা খুলে এই চেয়ারে বসো”।