তারকাঁটার দুটো ফেনসিং সমান্তরাল রূপে অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত, মাঝের ফাঁকা অংশও তারকাঁটার জঙ্গলে বোঝাই, এটা ভারত-পাকিস্তানের সীমান্তের চেহারা। উভয় দেশের সৈনিকরা বিভিন্ন বিটে নিজেদের মতন করে পাহারা দেয়। পরস্পরের মধ্যে কথাবার্তা যেমন হয়, আবার উভয় দেশের মধ্যে গোলাগুলি বর্ষণও ব্যাতিক্রমী ঘটনা নয়। প্রচন্ড শীতের মধ্যে পাহারা দেবার কোন অন্যথা হয় না। তখন সন্ধ্যে হয়নি, গুরবিন্দার সিং দাঁড়িয়ে পড়ল, “ আরে আনোয়ার বহুত দিনো বাদ, ক্যায়সে হো তুম”।
“আচ্ছা হ্যায়। তুমাহারা কেয়া খবর?”
“তুম হে দেখনে বাদ, বহুত সারে ইয়াদে তাজা হো গ্যয়ি। বিষেণপুর কে জঙ্গ মে হাম এক সাথ লড়ে থে”।
“ভুল যাও গুরবিন্দার, উওসব ভুল যাও, আভি তুম নেহি বোল সাকোগে “দিল্লী চলো”, অউর হাম ভি নেহি বোল সাকেঙ্গে ‘জয় হিন্দ’, আজাদী কে বাদ হাম পাকিস্তানী, তুম হিন্দুস্তান মে,করীব আঠার সাল হো গিয়া, মুলক কা বাটওয়ার হো চুকা হ্যায়।
“হিন্দুস্তান কিঁউ ইন্ডিয়া বোলো ”।
“নেহি ভাই হাম পাকিস্তানী, হাম তো হিন্দুস্তানহি বোলেঙ্গে”।
“অউর আগর সুভাষজী ওয়াপাস আয়ে তো…”
“তব হাম একেলা হি ইয়ে ফেনসিং তোড় দেঙ্গে গে , হো যায় গা সব কুছ বরাবর, জোর সে চিল্লায়েঙ্গে “ইন্ডিয়া জিন্দাবাদ”। দুজনেই হো হো করে হেসে উঠল। গুরবিন্দার ওভারকোটের পকেট থেকে চ্যাপ্টা রাম্ এর কন্টেনার বার করে।
“ডিউটি খতম হোনেবালা হ্যায়, তুম ভি থোড়া সা পি লো, হ্যায় কুছ?”। আনোয়ার কোটের পকেট থেকে ছোট্ট পাতলা কাঁচের গ্লাস বার করে।
“চলো উধার”।
“জলদি করো, হামারা ভি রিলিভার আ জায়গা,”। আনোয়ারও এগিয়ে যায় গুরবিন্দারের সঙ্গে, মাঝে শুধু তারকাঁটার ব্যবধান। দুজনেই এগোতে থাকে যেখানে দিয়ে অনায়াসে আনোয়ারের গ্লাসে পানীয় ঢেলে দিতে পারবে গুরবিন্দার। আনোয়ার নিচু হয়ে হাত বাড়িয়ে দেয়, গুরবিন্দারও তারকাঁটার ফাঁক দিয়ে আঁচড় বাঁচিয়ে আনোয়ারের গ্লাস ভরে দিতে থাকে, টিনের কন্টেনারই ওর গ্লাসে ছুঁইয়ে চাপা গলায় বলে চিয়ার্স, আনোয়ার হেসে বলে চিয়ার্স। চলে আসার আগে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেই মন্ত্র দুজনে উচ্চারণ করে “ ইত্তেফাক ইতমত কুরবানী”।
সন্ধ্যের পার হয়ে রাতের অন্ধকার নেমেছে, সবে মাত্র গুরবিন্দার পিছন ফিরেছে, কানে এল কাঁচ ভাঙ্গার আওয়াজ, ঘাড় ঘুরিয়ে তেমন কিছু দেখতে পেল না, ভেসে এল আনোয়ারের কন্ঠস্বর- “ক্যায়া হুয়া? ফেক কিউ দিয়া?”
“পাগাল হো গ্যায়ে হ ক্যায়া?, ইস মে জহর মিলা হ্যায়। দুশমন কো ভরসা নেহি করতে। চলে আও”।আনোয়ারের রিলিভারের কন্ঠস্বর থেকে ঘৃণা ঝরে পড়ছিল।
আর দেরী করেনা গুরবিন্দার সঙ্গে সঙ্গে ক্রলিং করে ওদের চোখের আড়ালে চলে যেতে চাইল। কারণ সে জানে এর পর হয়ত শুরু হবে গুলি বর্ষণ।