পরিচয়

প্রতিটি ব্লগেই এই অংশটি বেশ বিড়ম্বনার। নিজের সম্পর্কে কিছু বলার অর্থ হল, সেখানে আত্মপ্রচারের একটা জায়গা থেকেই যায়। অর্থাৎ এই about me হচ্ছে নিজের ঢাক নিজে পেটাও গোছের কিছু একটা। যাই হোক, কাঠি যখন পেয়েছি একটু বাজাতে ক্ষতি কি?

প্ৰত্যেক মানুষেরই অনেক কিছু করার চিন্তা ভাবনা মাথার মধ্যে থাকে। সারা জীবনে তার অধিকাংশই করা হয়ে ওঠে না নানান টানাপোড়েনে। নিজের কথা সাতকাহন করে বলতে বসলেই একটু সংকোচ হয়। গ্রাসাচ্ছেদনের জন্যে জীবিকা নির্ভর কাজটুকু বাদ দিলে তেমন কিছু তো করাই হয়ে ওঠেনি।জীবনের প্রথম লগ্নে অনেক স্বপ্ন থাকে। সেগুলো বাস্তবায়িত করতে গেলে যে নিষ্ঠা, নিয়মানুবর্তিতা, একাগ্রতার সঙ্গে ভাগ্যের আনুকূল্যের প্রয়োজনও অন স্বীকার্য। নানান কারণে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সেই স্বপ্ন পূরণ হয় না। স্বপ্ন অধরা থেকে যায় , পাল্টে যায় মনের ইচ্ছে। যখন সামান্য ক্রিকেট খেলছি, অনেক স্বপ্ন গড়ে উঠেছিল। কিন্তু তা তো বেশীদিন স্থায়ী হল না। যখন বুঝতে পারলাম নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে লক্ষ্যে পৌঁছতে না পারলে ক্রিকেট নিয়ে স্বপ্ন দেখা বৃথা। বিষয় বদলালেও স্বপ্ন দেখা তো বন্ধ থাকে না। প্রফেসর সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সান্নিধ্যে নাটক তখন রক্তের মধ্যে ঢুকে গেছে। কিন্তু তারই বা স্থায়ীত্ব কতদিন? সাংসারিক দায়িত্বের চাপে সব কিছু ছেড়ে কর্ম জীবনে প্রবেশ করতে হয়েছিল। পুলিসের চাকরীর বন্দী দশায় এই সব ইচ্ছে বজায় রাখা দূর অস্ত। সম্পুর্ন একটা অন্য রকম পরিবেশে সুকুমার প্রবৃত্তি গুলি বাঁচিয়ে রাখাই মুশকিল। চাকরী যত পুরানো হয় দায়িত্ব সিন্দাবাদের ঘাড়ে চড়ে বসা বুড়োর মত আরো চেপে ধরে। থানার পরিচলনার দায়িত্ব সামালে অবসর সময়ে দু একটা কবিতা লেখা ছাড়া তেমন ভাবে কিছু করে ওঠা হচ্ছিল না।হুকুম সর্বস্ব পুলিশের চাকরীতে চিন্তা ভাবনা হয়ে ওঠে একমুখী। আস্তে আস্তে অজান্তে নিজের মধ্যে রোবট সদৃশ সত্ত্বা তৈরি হয়ে যায়। সৃষ্টি শীল কাজ করা দুরূহ হয়ে পড়ে।তারই মধ্যে পরিত্রানের একমাত্র উপায় ছিল সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ।তাও হয়ে উঠছিল না পরিবেশের অভাবে।

২০০৫সালে মাথাভাঙ্গা থানায় আই সি হিসাবে যোগদান করার পর কয়েক জন সাহিত্য প্রেমীর সঙ্গ পাওয়ায় সুপ্ত ইচ্ছেটা আবার চাগাড় দিয়ে উঠল। ভেবে দেখলাম এছাড়া আর আমার কোন গতি নেই, বাঁচতে হলে খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান ছাড়াও পড়া ও লেখাই একমাত্র রসদ হতে পারে।গল্প লেখার পাশাপাশি, যুক্ত হয়ে পড়লাম সঞ্জয় সাহার তিতির পত্রিকার সম্পাদনার কাজে। কিছু কিছু প্রবন্ধ লেখার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হল। অবসর গ্রহণের পর সাহিত্য রচনা তো ছিল , সঙ্গে যুক্ত হল গল্প সল্প র আটচালা ,এই নামেই প্রতিমাসে গল্প পাঠের আয়োজন যার মাধ্যমে বিভিন্ন লেখকদের সাথে ভাবের আদানপ্রদান ঘটতে লাগল। লিখিত গল্পের সংখ্যা ষাট ছড়িয়ে গেছে অনেকদিন। উপন্যাস দুটি, বিষণ্ন দুপুর, ও অভৌগলিক। এই দুটি উপন্যাসই কৃষ্ণসীস পুজো সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। বিষণ্ন দুপুর, ২০১৫ কৃষ্ণসীস প্রকাশন থেকেই বই হিসাবে প্রকাশিত হয়েছে। এর আগে ২০০৭ সালে পত্রলেখা প্রকাশন থেকে এবং অপরাহ্নে নাম দশটি গল্পের একটি সংকলন প্রকাশিত হয়েছিল। অন্যন্য অনেক গুলিই গল্প আনন্দবাজার, দেশ, সাপ্তাহিক বর্তমান, এবং বিভিন্ন লিটিল ম্যাগাজিন থেকে প্রকাশিত হয়েছে।