পঞ্চম বল

হাল্কা হাততালির রেশটা ময়দানে মিলিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই রনিত বুঝতে পারল ওভার শেষ,মেডেন ওভার। কিন্তু সেই অভিনন্দনটুকু উপভোগ করার মতন অবস্থায় রনিত আজ নেই, তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। কিছুতেই সে মনে করতে পারছে না কোন বলটা তাকে নো করতে বলা হয়েছিল,ফোর্থ না ফিফথ। শেষটা ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তেই ওভারটা শেষ করে ফেলেছিল রনিত। ময়দানের হাততালিতে স্তম্ভিত ভাঙতেই সে বুঝতে পারল আর কিছু করার নেই। কোনোক্রমে শরীরটাকে টানতে টানতে থার্ডম্যানের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল পরর্বতী ওভারে ফিল্ডিং করার জন্যে। কিন্তু ও তো দুহাজার ডলারের বিনিময়ে বুকির কথায় রাজী হয়ে গিয়েছিল নো বল করতে। কিন্তু ওভারের কোন বলটা, টেনশনের মাথায় দ্বিতীয় বার জিজ্ঞাসাও করা হয়নি। কিন্তু এখন কি হবে, ভেবে কূল কিনারা পাচ্ছে না রনিত। এই যাঃ বলটা ফসকে বাউন্ডারী হয়ে গেল, এ বলটা মিস করার কথাই নয় তার, কিছুতেই কনসেনট্রেট করতে পারছে না খেলায়।
ঘটনাটা ঘটেছিল গতকাল বিকালে, পাহাড় ঘেরা এক সমুদ্র সৈকতে এবারের ওয়ান ডে ইন্টারন্যাশানাল, এ যাবৎ রনিতের পারফরমেন্স নিয়ে সমালোচনার কোন অবকাশ নেই, ভারতীয় দলে সে এখন অপরিহার্য। সমুদ্রটা এক ঝলক দেখার পর থেকেই ভীষণ টানছিল রনিতকে, নেট প্র্যাকটিসের পর রনিত এক মুহুর্ত দেরী করেনি। সোজা চলে গিয়েছিল সমুদ্র তীরে। অসাধারণ সৌন্দর্য। সমুদ্রের পাড় ধরে অনেকটা দূরে চলে এসেছিল রনিত। পাহাড়ের মাথায় তখন সূর্য অস্ত যাচ্ছে। আনমনে সমুদ্রের দিকে তাকিয়েছিল সে, হঠাৎ কানে এসেছিল “রানিট গুহা, আই প্রজ্যুম” চমকে উঠে তাকিয়ে ছিল সেদিকে, এক বিদেশী তরুনী তার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে, পরনে হট প্যান্ট, শার্টের দুটো খুট পেটের ওপরে গিঁট বাঁধা। চোখের গগলস মাথার বাদামী চুলে আটকানো। এই ধরনের মেয়েরা ক্রিকেটারদের সঙ্গে মেলামেশা করতে চায়, রনিত সেটা জানে। তাই ভেবেছিল বিকেলটা ভালই কাটবে।
নীল সমুদ্রের সামনে অনেকটা সময় কেটে গিয়েছিল দুজনের। কিন্তু ভাবতে পারেনি একটা নো বলের জন্যে দু হাজার ডলার অফার আসবে। ভয় পেয়ে গিয়েছিল রনিত। আশপাশে তাকিয়ে দেখেছিল কেউ আছে কিনা, রাজী হবার প্রশ্নই ছিল না। মেয়েটা কিন্তু তার হাঁড়ির খবর নিয়ে এসেছে। মায়ের ক্যানসারে কিভাবে জমানো টাকা ড্রেনেজ হচ্ছে। খেলা ছাড়া তার আর কোন সোর্স অফ ইনকাম নেই। রনিত ভয় পাচ্ছিল ধরা পড়ার। মেয়েটা বোঝাতে শুরু করেছিল,অন্ততঃ ভারতে ম্যাচ ফিস্কিং এ যাবৎ কারুর কিছু হয় নি। শ্রীশান্ত হাতেনাতে ধরা পড়েও খালাস হয়ে যায়। আজাহারুদ্দিন শেষ পর্যন্ত এমপি হয়। আর যে লোকটা এর বিরুদ্ধে লড়াই করল,সেই সৌরভ গাঙ্গুলীকে ফোরসিবলি রিটায়ার করানো হয়। মেয়েটা একনাগাড়ে বলে যাচ্ছিল কথা গুলো।রনিত কি এটা জানে না, যে এর বিরুদ্ধে লড়াই করে, তার কেরিয়ার শেষ করে দিতে সবাই উদ্যত, সুতরাং তার ভয়ের কিছু নেই। সব কিছু জানা সত্ত্বেও সে ঘাড় নাড়ছিল। উঠে দাঁড়িয়ে চলে আসার উপক্রম করতেই মেয়েটাও রনিতের দুই কাঁধ ধরে ঘুরিয়ে নিজের মুখোমুখি দাঁড় করায়, চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে “স্টেডি, লুক এ্যাট মি। ওনলি ওয়ান কয়েশ্চেন। ডু ইউ নো হোয়াটস দ্য ফেট অফ টুমরোস ম্যাচ”। রনিত ঘাড় নাড়ে। এরপর রনিত কে রাজি করাতে খুব বেশী সময় লাগেনি মেয়েটার। রনিতের হাতে একটা রোলেক্স ঘড়ি বেঁধে দিয়ে ডিল পাকা করে নিয়েছিল।
ফিল্ডিং স্পটে দাঁড়িয়ে রনিত ঘামতে শুরু করেছে, ও খুব ভাল করেই জানে এদের কাছে কথা দিয়ে কথা না রাখলে কি হয়। বব উলমারের মতন খুন হয়ে যাওয়া বিচিত্র নয়। ওভার শেষ হবার পর ক্যাপ্টেন ডাকছে রনিতকে পরের ওভার বল করার জন্যে। রনিত কাছে আসতেই ক্যাপ্টেন তার কাঁধে হাত দিয়ে পরের ওভারের বোলিং পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে করতে এগিয়েও চলেছে বোলার যেখান থেকে বোলিং শুরু করে সেই দিকে।এতক্ষণ বলটা ক্যাপ্টেনের হাতেই ছিল, সেটা রনিতের হাতে দিয়ে চাপা গলায় বলল-“ইয়াদ হ্যায় না,তুমহারে লিয়ে ফিফথ ডেলিভারী” মুঠোহাতে বুড়ো আঙ্গুল উচিঁয়ে ছোট্ট ঝাঁকুনিতে বুঝিয়ে দিল সে, রনিতকে এবার কি করতে হবে।

Leave a Reply